‘বাঙ্কারে আছি, কিছুক্ষণ পরপর বিমান হামলার সাইরেন বাজছে’

'আমরা ইউক্রেনে একটি বাঙ্কারে আছি। কিছুক্ষণ পরপর বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হচ্ছে। একটু আগেও সাইরেন বাজানো হয়েছে। ২ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, পানির সমস্যা চলছে।'

গতকাল শনিবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন ইউক্রেনের সুমি শহরের একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নেওয়া সুমি স্টেট মেডিকেল কলেজের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মো. সাব্বির আহমেদ।

ঢাকার বাসিন্দা সাব্বির ২০১৬ সালে ইউক্রেনে পড়তে যান। আর ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে পড়া শেষ করে দেশে ফেরার কথা ছিল তার। তার আগেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে আরও ৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ জন বাংলাদেশি সুমি শহরের এই বাঙ্কারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে সাব্বির, রিফাত ভূইয়া, ফয়সাল মাহমুদ ও রুবায়েত হাবিব। তাদের সঙ্গেই আছেন বাংলাদেশি ২ জন ব্যবসায়ী এবং তাদের একজনের স্ত্রী ও ২ সন্তান।

সুমির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে উল্লেখ করে সাব্বির বলেন, 'রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে এখানে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ হচ্ছে, বম্বিং হচ্ছে। আজ (শনিবার) সকালেও বিমান হামলা হয়েছে।'

বাঙ্কারটিতে বাংলাদেশি ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থী আছেন জানিয়ে সাব্বির বলেন, 'সুমি অনেক ঠাণ্ডাপ্রবণ এলাকা। আজ তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ফাইভ ডিগ্রি। বিদ্যুৎ না থাকায় হিটিং সিস্টেম বন্ধ। হিটিং সিস্টেম ছাড়া এখানে থাকা খুবই কঠিন। মোবাইলও ঠিকমতো চার্জ করতে পারছি না। ফোন বন্ধ করে রাখি, যাতে মাঝেমধ্যে অন করে বাসার সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো চার্জ অন্তত থাকে।'

'খাবার নিয়েও আমরা সমস্যার মধ্যে আছি। দিন যত যাচ্ছে তত খালি হচ্ছে আশেপাশের গ্রোসারি শপগুলো। প্রথমে আমরা কিছু খাবার রেখে দিয়েছিলাম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, সেগুলোও শেষের দিকে,' যোগ করেন তিনি।

পোল্যান্ড বা রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদের উদ্ধারে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত কোনো নিরাপদ জায়গায় যেতে পারি।'

তাদের আশ্রয় নেওয়া বাঙ্কারটি ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার এবং নিকটতম ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার দূরে।

সাব্বির বলেন, 'আমাদের প্রধান সমস্যাটা হচ্ছে, সুমি শহরটি ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তের সম্পূর্ণ বিপরীতে এবং রাশিয়ার খুব কাছাকাছি। সে কারণে হয়তো দূতাবাসের একটু বেশি সময় লাগছে। তারা আমাদের বলেছেন, ধৈর্য্য ধরতে। পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগযোগ রাখছেন। তিনি আমাদের মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছেন এবং যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।'

রাশিয়া সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার বিষয়ে সাব্বির বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্ত দিয়েও পার হওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে দূতাবাসের সঙ্গে। কিন্তু সেটা আসলে নিরাপদ না। ওই রোডটাই সম্পূর্ণ অনিরাপদ। সেখানে রাশিয়ান সেনাবাহিনীও আছে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীও আছে। ওই সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার জন্য যাওয়ার পথে কোনো একটি বাহিনী যদি আক্রমণ করে দায় স্বীকার না করে তাহলে কী করার থাকবে?'

বিদ্যুৎ, পানি, খাবারসহ নানা সমস্যায় অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন পার করলেও সাব্বিররা আশায় আছেন দ্রুতই তারা যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন ছাড়াতে পারবেন। পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসও তাদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans to include private sector in US tariff talks

Bangladesh is currently reviewing the proposals and will send a response within the next couple of days, Commerce Secretary Mahbubur Rahman told The Daily Star yesterday over the phone.

15h ago