'আমরা বাঁচতে চাই’ ক্যাম্পে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের আর্তনাদ

ইউক্রেনের জুরাভিস শহরের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থাকা ৫ বাংলাদেশির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডেইলি স্টারকে তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নির্যাতন করছে। তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ায় তারা সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হচ্ছে না।

গত শনিবার তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনারা তাদের 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে।

জুরাভিস ক্যাম্পে আটকে বাংলাদেশিরা এক ভিডিও বার্তায় তাদের উদ্ধারের জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। ক্যাম্পে তাদের দুর্দশা নিয়ে ডেইলি স্টারসহ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। এর পরই ইউক্রেনের ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর নির্যাতন চালায় বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পে আটক রিয়াদ মালিক।

রিয়াদ মঙ্গলবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও বার্তা পাঠান। মোবাইল ফোনেও তার সঙ্গে কথা হয়। ক্যাম্পে আটক থাকা একজনের লুকিয়ে রাখা ফোন থেকে তিনি বার্তা পাঠান। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা হয়। আতঙ্কিত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'আরেকজনের ফোন থেকে কথা বলছি। নির্যাতন করা হচ্ছে। ক্যাম্পে খাবার ও পানির সরবরাহ নেই। জুরাভিস শহরে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। চারদিক থেকে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। রাশিয়ার বাহিনী ক্যাম্পে আক্রমণ করলে, বোমা ফেললে এখানে বন্দী বাংলাদেশি ৫ জনসহ ১২০ জনের সবাই মারা যাব। আমাদের বাঁচানোর কেউ কি নেই! সরকার কি আমাদের বাঁচাতে পারে না? আমাদের এখান থেকে মুক্ত করতে পারে না? আমরা বাঁচতে চাই, এভাবে মারা যেতে চাই না।'

পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াদ বলেন, 'দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে তারা খুব ধীর গতিতে কাজ করছে। বলছি না যে তারা চেষ্টা করছে না। কিন্তু পোল্যান্ডের দুতাবাস বা বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা বাঁচতে পারব না। আমরা বাঁচতে চাই।'

ইউক্রেনের মিকোলাইভ শহরের আরেকটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন আরও প্রায় ৬০ জন, যাদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশি। তাদের একজনের নাম জহিরুল ইসলাম ও অন্যজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। গত রাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের অবস্থায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রাতেও হিটিং সিস্টেম চলছে না। সেই সঙ্গে খাবার ও পানির সংকট আছেই। শহরটি রাশিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।'

এই ক্যাম্পে আটক বেসামরিক নাগরিকদেরকেও ইউক্রেনের সেনারা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তাদেরকে উদ্ধারের ব্যাপারে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, 'দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা তাদেরকে পাসপোর্ট ও অন্যন্য ডকুমেন্টের কপি পাঠিয়েছি। তারা বলেছেন, আমাদের নামে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হচ্ছে যাতে আমরা ইউক্রেন ছাড়তে পারি। সেই সঙ্গে ডিটেনশন ক্যাম্প পরিচালনাকারীদের সঙ্গেও দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে বলে জানানো হয়েছে। আমরা যদি দ্রুত মুক্ত হতে না পারি, তাহলে হয়ত বোমার আঘাতে মরতে হবে। লাশও হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।'

কাজের খোঁজে ইউরোপে যেতে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে। তার মধ্যে অন্যতম রুট রাশিয়া। রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেন অনেকেই। রিয়াদ এই রুট ধরে ইউরোপে যেতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন।

ইউক্রেনের সুমি শহরে বাঙ্কারে আটকে থাকা ৯ বাংলাদেশির মধ্যে ৪ জন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সুমি শহরে একটি বাঙ্কারে আটকে আছেন ৯ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ৪ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী সাব্বির, রিফাত ভূইয়া, ফয়সাল মাহমুদ ও রুবায়েত হাবিব। বাংলাদেশি ২ জন ব্যবসায়ী এবং তাদের একজনের স্ত্রী ও ২ সন্তান। বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছাড়ার সুযোগ দিতে গতকাল থেকে সুমি শহরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। গতকাল এই ৯ বাংলাদেশির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আজ সকালে সাব্বির একটি ছবি ও একটি ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, 'সুমি শহরে অবিরাম বোমা বর্ষণ চলছে।'

চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা কেমন আছেন, এখনও বাঙ্কারে আছেন কি না, শহর ছাড়তে পারছেন কি না, কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।

সুমি শহরে রাশিয়ার বোমা বর্ষণের মধ্যে একটি ভবন থেকে ধোঁয়া উঠছে। ছবি: সাব্বির

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে বলেছে, ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক সবাইকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তাদের সবার নামে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছে। ইউক্রেনের অনারারি কনস্যুলারের কাছে ট্রাভেল পাস পাঠানো হয়েছে। পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন গত ২ দিনে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন।

সুমি শহরে বাঙ্কারে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্ধারের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাদেরকে উদ্ধারের ব্যাপারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। তারা যেখানে আটকে আছেন সেই জায়গাটি পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দূরে। তাদেরকেও ইউক্রেন থেকে বের করে আনার জন্য দূতাবাস কাজ করছে।

এর আগে শনিবার সুমি শহর থেকে সাব্বির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'আমরা একটি বাঙ্কারে আছি। কিছুক্ষণ পরপর বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হচ্ছে। একটু আগেও সাইরেন বাজানো হয়েছে। ২ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, পানির সমস্যা চলছে। ফোন চার্জ করতে পারছি না। খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago