১২ প্রকল্পের ৯টির সময় বেড়েছে, ৩টি শুরু হয়নি

গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে র‍্যাপিড বাস ট্রানজিট প্রকল্পে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: এস কে এনামুল হক

পরিবহন খাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তবে সরকারের পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরনো কিছু সমস্যার সমাধান এখনো করতে পারেনি, যার কারণে খরচ ও সময় বেড়েই চলেছে।

এডিবি বলছে, প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় পরিপূর্ণ নকশার অভাব, বিভিন্ন বিষয়ে বিলম্ব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা। এর মধ্যে আছে প্রকল্প প্রস্তুতি ও অনুমোদন, প্রকল্প সংক্রান্ত ক্রয়, চুক্তি সই, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন।

এই বিষয়গুলো এডিবি বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে সংস্থাটি সমাধানও দিয়েছে। তারপরও সার্বিক পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।

একটি বৈঠকের জন্য তৈরি নথি থেকে জানা যায়, এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত পরিবহন খাতের ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ৯টির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। অপর ৩ প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

বহু বছর ধরে চলতে থাকা এ সমস্যাগুলোর পাশাপাশি বেশিরভাগ প্রকল্প করোনা মহামারির কারণেও সমস্যায় পড়েছে। তবে সার্বিকভাবে নতুন চুক্তি সই ও তহবিল বণ্টনের দিক দিয়ে গত বছরটি বেশ ভালো গেছে। চুক্তি সই ও তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকায় এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভা (টিপিআরএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি এ বছরে প্রথম বৈঠক।

এই সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব এবং এডিবির বাংলাদেশ রেসিডেন্ট মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর। প্রতিটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও এ সভায় অংশ নেন।

পরিবহন খাতে এডিবির ভূমিকা

২০২১ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬টি খাতের ৫০টি প্রকল্পে এডিবি ঋণ ও অনুদান হিসেবে মোট ১৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

এর মধ্যে ১২টি প্রকল্প পরিবহন খাতে, যেগুলোতে ১৯টি ঋণ ও একটি অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মোট মূল্যমান ৩ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার।

১২টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ৫টি বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ১টি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।

১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি পরিবহন খাতে সহযোগিতা করে আসছে, বিশেষ করে সড়ক ও রেল প্রকল্পে। তবে গত এক দশকে এই খাতে এডিবির দেওয়া ঋণের পরিমাণ বেশ বেড়েছে।

এডিবির নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে এই খাতে সংস্থাটির দেওয়া অর্থের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৭৪১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এ বছর অর্থের পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন হয়েছে।

সমস্যাগুলো কী?

এডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ নকশার অভাবে প্রকল্পের কাজের পরিবর্তন হয় এবং একই সঙ্গে সময়সীমা ও খরচও বেড়ে যায়। মানসম্পন্ন সমীক্ষা ও অনুসন্ধানের অভাবে এ ধরনের নকশা পরিপূর্ণতা পায় না।

কিছু বড় বাজেটের চুক্তি সই হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি), রিভাইজড ডিপিপি এবং টেকনিকাল অ্যাসিস্টেন্স প্রোজেক্ট প্রপোজাল (টিএপিপি) তৈরি এবং সেগুলো অনুমোদনের জন্য এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি সময় লাগছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বর্তমানে ১৮৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। এর মধ্যে ৮০টির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৭ প্রকল্পের মধ্যে ২৬টি প্রকল্পের সময়সীমা কমপক্ষে ১ বার পরিবর্তন হয়েছে।

সমাধান

পরিস্থিতি উন্নয়নে এডিবির বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে।

সংস্থাটি বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ ছাড়াও তারা সরকারের পরিকল্পনা অনুমোদন প্রক্রিয়া উন্নয়নের পরামর্শও দিয়েছে।

এডিবি একই সঙ্গে দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ প্রকল্প ম্যানেজার নিয়োগ দিতে বলেছে, যারা এডিবির কর্মপদ্ধতি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও চুক্তি সই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh energy import from Nepal

Nepal set to export 40mw power to Bangladesh via India today

Bangladesh has agreed to import electricity from Nepal for the next five years

3h ago