ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে চীনকে তেল দেবে সৌদি আরব

মার্কিন ডলার বদলে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মাধ্যমে তেলের চালানের আংশিকের মূল্য নির্ধারণ করতে বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে সৌদি আরব।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন ডলার বদলে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মাধ্যমে তেলের চালানের আংশিকের মূল্য নির্ধারণ করতে বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে সৌদি আরব।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন উদ্যোগে বৈশ্বিক পেট্রোলিয়াম বাজারে ডলারের আধিপত্য কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউয়ান মূল্যে তেল চুক্তি নিয়ে চীনের সঙ্গে সৌদি আরবের আলোচনা গত ৬ বছর ধরে চলছে। তবে, চলতি বছর সেটি বছর ত্বরান্বিত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে সৌদি আরবকে রক্ষায় মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে তাদের ক্রমশ অসন্তুষ্টিকে।

সৌদি আরবের রপ্তানি করা তেলের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি কেনে চীন। এই বিক্রয় যদি ইউয়ানে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তাহলে চীনের মুদ্রার মান বৃদ্ধি পাবে। সৌদি আরবের তেল বিক্রি প্রতিষ্ঠান আরামকো 'পেট্রোইউয়ান' নামে তাদের তেলের মূল্য নির্ধারণের মডেল অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বিবেচনা করছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানির কিছু অংশ ডলার ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রায় বিক্রি করলে সেটি সৌদি আরবের জন্য উল্লেখযোগ্য বড় সিদ্ধান্ত হবে।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ শতাংশ তেলের লেনদেন ডলারে করা হয়। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সময়কালে সৌদির নিরাপত্তায় মার্কিন সহায়তা বিষয়ক চুক্তি হওয়ার পর থেকেই দেশটি শুধুমাত্র ডলারে তেলের লেনদেন করেছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে চীন। সম্প্রতি তারা সৌদি আরবকে তাদের নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে সহায়তা করেছে, পারমাণবিক কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছে এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিজস্ব প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু করেছে।

মার্কিন-সৌদি বন্ধনে কমছে উষ্ণতা

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময়কালে মার্কিন-সৌদি সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনার পর ২০২০ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় বাইডেন সৌদি আরবকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন তার জেরেই এই দূরত্ব।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, খাশোগিকে হত্যায় নির্দেশদাতা যুবরাজ মোহাম্মদ।

গত মাসে বাইডেন এবং সৌদি বাদশাহ সালমানের মধ্যকার একটি ফোনালাপে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন যুবরাজ সালমান।

এমনকি মার্কিন-সৌদি অর্থনৈতিক সম্পর্কেরও অবনতি হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি।

ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল সৌদি তেল আমদানি করত। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ব্যারেলেরও নিচে।

চীন ও সৌদি আরবের আলোচনা সম্পর্কে অবগত এক সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, 'নাটকীয়ভাবে সব বদলে গেছে। সৌদিদের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক বদলেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক চীন সৌদি আরবকে বেশ কিছু লাভজনক প্রণোদনা দিচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আপনি যতকিছু কল্পনা করতে পারেন তার প্রায় সবকিছুই সৌদি আরবকে দিচ্ছে চীন।'

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Column by Mahfuz Anam: Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

13h ago