ছাড়া পেয়েছেন ইউক্রেনের ক্যাম্পে আটকে থাকা সেই ৪ বাংলাদেশি

ইউক্রেনের জুরাভিসের একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা ৪ বাংলাদেশির মধ্যে কাশেম আহমেদ ও উজ্জ্বল আলী মিয়া গত বুধবার এবং রিয়াদ মালিক ও নূর মোহাম্মদ আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাড়া পেয়েছেন। 
আজ জুরাভিস ক্যাম্প থেকে ছাড়া পেয়ে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে আসছেন ২ বাংলাদেশি রিয়াদ মালিক ও নূর মোহাম্মদ (বামে)। জুরাভিস ক্যাম্পে আটক অবস্থায় ৪ বাংলাদেশি রিয়াদ মালিক, কাশেম আহমেদ, উজ্জ্বল আলী মিয়া ও নূর মোহাম্মদ (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের জুরাভিসের একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা ৪ বাংলাদেশির মধ্যে কাশেম আহমেদ ও উজ্জ্বল আলী মিয়া গত বুধবার এবং রিয়াদ মালিক ও নূর মোহাম্মদ আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাড়া পেয়েছেন। 

ছাড়া পাওয়া ২ জন আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছেছেন। পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টার এই ৪ বাংলাদেশির আটকে থাকার বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগের কারণে জুরাভিসের ক্যাম্পটি থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করা হলেও এখনো সেখানে ভারতীয়সহ অন্যান্য দেশের প্রায় ১১৫ জন নাগরিক আটকে আছেন।

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লার উদ্যমী প্রচেষ্টায় এই ৪ জন এবং তার আগে ২ জন বাংলাদেশি ক্যাম্প থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আজ ২ বাংলাদেশির সঙ্গে ২ জন ভারতীয়ও ছাড়া পেলেন। ২ ভারতীয়কে সীমান্তে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোল্যান্ডের দূতাবাস সহায়তা করেছে।

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুরাভিসে ৫ বাংলাদেশি আটক ছিলেন বলে জানা গেলেও পরে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, সেখানে ৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে ২ জন বুধবার ছাড়া পেয়ে আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করে গেছেন। দূতাবাসে পৌঁছালে তাদের খাবারসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে তাদের পছন্দমতো একটি জায়গায় পৌঁছে দিয়ে এসেছি। আটক বাকি ২ জন আজ ছাড়া পেলেন। এ ছাড়া আজ ২ জন ভারতীয়ও ছাড়া পেয়েছেন। আমাদের নিযুক্ত ব্যক্তি তাদেরকে অন্য আরেকটি সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন।'

গত বুধবার ছাড়া পাওয়া ২ জনের একজন উজ্জ্বল আলী মিঁয়া বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। আজ শনিবার তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। তিনি গতকাল রাতে পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে পৌঁছেছেন। 

তিনি বলেন, 'পোল্যান্ডের দূতাবাস বিশেষ করে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা যে আন্তরিকতা ও গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ক্যাম্প থেকে বের করে আনলেন, তার কোনো তুলনা হয় না। তার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যেখানে ভারতীয়রা এখনো ক্যাম্পে আটকে আছেন। সেখানে রাষ্ট্রদূত আমাদের বের করে আনলেন!'

ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশিদের ছাড়িয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলেন, 'তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমি বহুবার কথাও বলেছি। তারা আমার কাছ থেকে আলাদা চিঠি চেয়েছিল, সেটাও দিয়েছি। আমি বারবার তাদের বলেছি, এমন যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে আটকে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা বলছিলেন, আটক যারা আছে তাদের বিচার শেষ না হলে কীভাবে ছাড়তে পারি। তারপরও আমি আটক বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দিলে তারা শেষ পর্যন্ত অনুরোধ রেখেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আজ ছাড়া পাওয়া ২ জনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন সরকারের আরও কয়েকটি অভিযোগ থাকায় তাকে সরাসরি ছেড়ে দিতে তারা রাজি হননি। ইউক্রেনে বাংলাদেশ অনারারি কনস্যুলেটের অ্যাডভাইজার মাহবুবুল আলম তার একজন ইউক্রেনীয় বন্ধুকে (একসঙ্গে তারা রাশিয়ায় পড়াশোনা করেছেন) রাজি করান জুরাভিসে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে যেতে। আমরা তাকে অথরাইজেশন লেটার দেই। তার কাছে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ রিয়াদসহ ২ জনকে হস্তান্তর করেন। তারা বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছেছেন।'

জুরাভিস ক্যাম্পে ৪ বাংলাদেশির সঙ্গে ১৩ ভারতীয় ছিলেন। ২ জন ভারতীয়কে আজ ছাড়া হয়েছে। এখনো ১১ জন ভারতীয় ক্যাম্পে আটকে আছেন। যে ২ ভারতীয়কে ছাড়া হয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিযুক্ত প্রতিনিধিই সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। ইতোপূর্বে ইউক্রেনের সুমি শহরে আটকে থাকা ৯ বাংলাদেশিকে ভারতীয়রা পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছিল। আজ ২ ভারতীয়কে বাংলাদেশ দূতাবাস সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছে। 

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ বাংলাদেশিকে নিয়ে আসার জন্যে আমরা যে ইউক্রেনীয়কে নিযুক্ত করেছিলাম, তিনিই ২ ভারতীয়কেও অন্য আরেকটি সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। তবে ২ বাংলাদেশির সঙ্গে একই গাড়িতে তাদের পোল্যান্ড সীমান্তে আনা যায়নি। কারণ ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে একই গাড়িতে আসতে দিতে রাজি হয়নি। ২ বাংলাদেশিকে পৌঁছে দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি সেই গাড়ি নিয়েই আবার গিয়ে তাদের এনে অন্য আরেকটি সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন।'

পোল্যান্ডে পৌঁছাতে ২ বাংলাদেশির কতটা সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলেন, 'সীমান্তের ইমিগ্রেশন পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে কতটা সময় লাগবে। ভিড় কম থাকলে দ্রুতই পোল্যান্ড সীমানায় পৌঁছে যাবেন বলে আশা করছি।'

ইউক্রেন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে কী লেখা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, 'চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমরা জেনেছি যে এই বাংলাদেশিরা ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন। আমরা শুনেছি যে তারা বিচারাধীন আছেন। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাদের যেন মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং সীমান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করা হয়।'

আজ ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়া ২ জনের বিষয়ে ইউক্রেনে বাংলাদেশ অনারারি কনস্যুলেটের অ্যাডভাইজার মাহবুবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় সময় সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ছেড়ে দিয়েছে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ। আমাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একজন গিয়ে তাদের নিয়ে আসেন এবং এখন তারা ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে।'

'এই ২ জন ছাড়া পাওয়ার পর ইউক্রেনের কোনো ডিটেনশন ক্যাম্পে আর বাংলাদেশি কেউ আটকে নেই,' বলে যোগ করেন তিনি।

ইউক্রেন ত্যাগের ক্ষেত্রে বয়সজনিত কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের কোনো সমস্যা নেই। ইউক্রেনের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না, এমন একটি নিয়ম করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago