কৃষকের মৃত্যু: সেচের পানির অভিযোগ আমলে নেয়নি বিএমডিএ

গোদাগাড়ি উপজেলার ইশ্বরিপুর গ্রামের গভীর নলকূপ। অভিযোগ আছে, সেচের পানি না দেওয়ার প্রতিবাদে এই নলকূপের পাশে কীটনাশক পান করেছিলেন দুই কৃষক। ছবি: স্টার

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর গ্রামের গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে পানি সরবরাহে গাফিলতির অভিযোগ করে আসছেন কৃষকরা।

কিন্তু বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সেসব অভিযোগ কখনো কানে তোলেনি।

ঈশ্বরীপুরের ওই নলকূপ থেকে অন্তত ১৫০ জন কৃষক তাদের ২৫০ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া, ওই নলকূপ থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের খাবার পানির যোগান দেওয়া হয়।

গত বুধবার ২ সাঁওতাল কৃষক ওই নলকূপের কাছে কীটনাশক পান করার পর অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসে। অভিনাথ মার্ডি ওই রাতেই এবং তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি শুক্রবার রাতে মারা যান।

২ কৃষকের মধ্যে একজনের পরিবার নলকূপ চালকের বিরুদ্ধে তাদের কৃষি জমিতে সেচের পানি সরবরাহে অবহেলার অভিযোগ করেছে।

শুক্রবার রাতে অভিনাথের স্ত্রী বাদী হয়ে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াতকে আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের করা অভিযোগের অন্তত দুটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

একটি অভিযোগ বিএমডিএ'র গোদাগাড়ী অফিসে ২০২০ সালের নভেম্বরে এবং অন্যটি ২০২১ সালের নভেম্বরে জমা দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কৃষকদের অভিযোগগুলোতে তার সমর্থন জানিয়ে বিএমডিএ'র নির্বাহী পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

অভিযোগগুলোতে কৃষকরা গভীর নলকূপ অপারেটর হিসেবে সাখাওয়াতকে অপসারণের দাবি জানান এবং ওই পদে নিয়োগের জন্য স্থানীয় একজন নারী কৃষকের নাম প্রস্তাব করেন।

চিঠি দুটিতে বলা হয়েছে, সাখাওয়াত কৃষকদের সেচের পানি থেকে বঞ্চিত করেছেন।

চিঠিগুলোতে আরও বলা হয়, সাখাওয়াত সময়মতো কৃষকদের জমিতে পানি সরবরাহ করেন না এবং অকারণে দিনের পর দিন পানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখে সেচ ও খাবার পানির সংকট সৃষ্টি করেন।

এ বিষয়ে বিএমডিএ'র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, তিনি চিঠিগুলোর বিষয়ে অবগত নন।

'স্থানীয় অফিসগুলো এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করে', বলেন তিনি।

গোদাগাড়ীতে বিএমডিএ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসানও অভিযোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খানও একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকরা গভীর নলকূপ অপারেটরের কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে জানালে আমি তাকে অপসারণের জন্য বিএমডিএকে চিঠি দিয়েছিলাম।'

'পরপর দুবার ওই অপারেটরকে অপসারণের সুপারিশ করেছিলাম', বলেন তিনি।

দুর্নীতিবাজ অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য বিএমডিএ কর্মকর্তাদেরকে দায়ী করেন তিনি।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, 'বিএমডিএ কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে নলকূপ অপারেটরদের অন্য সম্পর্ক থাকে। সে কারণে আমার সুপারিশও তারা উপেক্ষা করতে পারেন। বিএমডিএ কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে কৃষকদের সঙ্গে অন্যায় করে কোনো নলকূপ অপারেটর বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারেন না।'

সংসদ সদস্যের বক্তব্য জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে বিএমডিএ'র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, কৃষকদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তিনি খতিয়ে দেখবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans intensive election security measures; warns YouTubers

Approximately 1,50,000 police officials will undergo special training on election duties

7m ago