বহুমাত্রিক ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানি দ্রুত শেষ হচ্ছে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

ভূগর্ভস্থ পানির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে এর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে এবং তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

রোববার বিশ্ব পানি দিবস ২০২২ উপলক্ষে রাজধানীর পানি ভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, 'আমাদের দেশে ভূগর্ভস্থ পানির মূল ব্যবহার খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, সেচ কাজ এবং শিল্পক্ষেত্রে। এর বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে এর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে, এটি দ্রুত শেষ হচ্ছে এবং সেটি আবার পূরণ হচ্ছে না।'

'ফলে সুপেয় পানি প্রাপ্যতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে,' বলেন তিনি।

দেশে সেচ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'প্রতি বছর ভূগর্ভ থেকে ৩০ দশমিক ২১ ঘন কিলোমিটার পানি উত্তোলন করা হয়। এর ৮৬ শতাংশই ব্যবহার সেচ কাজে। এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা মৌসুমে গভীর ও অগভীর নলকূপগুলো পানি সংকটের মুখে পড়ছে।'

জাহিদ ফারুক বলেন, 'জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯, বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, বাংলাদেশ পানি বিধিমালা ২০১৮ এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর মাধ্যমে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।'

ভূগর্ভস্থ পানির নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণের লক্ষ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় প্রকল্প চলমান আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ প্রকল্পের আওতায় মৌজা পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থান নিরূপণ এবং ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, পর্যায়ক্রমে সব জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির নিরাপদ অঞ্চল সীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে মৌজা পর্যন্ত ম্যাপিংয়ের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে।

তিনি বলেন, 'দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।'

ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৪৩৯ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এতে ১০০টি ছোট নদী, ৩৯৬টি খাল ও ১৫টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে।

'এতে করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে, নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আনুমানিক ৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় জলাবদ্ধতা, বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় হতে জনসাধারণের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে,' যোগ করেন তিনি।

প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ে ২১২টি ছোট নদী, ২ হাজার ৪টি খাল ও ৯৯টি জলাশয় পুনর্খনন করা হবে। এর মোট দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৮৪৩ কিলোমিটার বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'দেশের উপকূলবর্তী ১৩টি জেলায় ১৩৯টি পোল্ডারের মধ্যে ৬১টি পোল্ডারে বর্তমানে পুনর্বাসন কাজ চালু আছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৯০টি স্কিমে ৮৫৮ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া এর আগের অর্থবছরগুলোতে সুনামগঞ্জ জেলায় নদী ড্রেজিং করায় হাওর এলাকায় আগাম আকস্মিক বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।'

এ সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Rampal fouling 2 Sundarbans rivers

The Rampal power plant began operation in late 2022 without an effluent treatment plant and has since been discharging untreated waste into the Pasur and Maidara rivers next to the Sundarbans.

4h ago