তাঁতের শাড়ি থেকে কাঠের পুতুল সবই মেলে ‘বৈশাখী মেলায়’

‘মলিন মর্ম মুছায়ে’ নতুন আনন্দে জেগে ওঠার প্রত্যয় নিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আজ সারাদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে মেতেছে কোটি বাঙালি।
ছবি: স্টার

'মলিন মর্ম মুছায়ে' নতুন আনন্দে জেগে ওঠার প্রত্যয় নিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আজ সারাদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে মেতেছে কোটি বাঙালি।

করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর উন্মুক্ত স্থানে বড় পরিসরে বর্ষবরণের আয়োজন করতে না পারার দুঃখ ভুলে, অবশেষে নানা আয়োজনে এ বছর দেশজুড়ে উন্মুক্ত স্থানে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে।

সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছে বৈশাখী মেলা।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে অন্যান্য বছর ১০ দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও, বৈশাখী আমেজকে আরও বাড়িয়ে দিতে এবার তা বাড়িয়ে ১৪ দিনব্যাপী করা হয়েছে। যা চলবে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত।

ছবি: স্টার

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানা গেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলেই দেশি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে উদ্যোক্তারা।

মেলায় পাওয়া যাচ্ছে, হাতে বোনা বিভিন্ন নকশি কাঁথা, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, তাঁতের শাড়ি, পাশাপাশি কাঠের পুতুল, মাটির টেপা পুতুল, মাটির গহনা, থ্রি-পিস, কাঁসা-পিতলের বাসন, পাটের তৈরি পণ্য এবং বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা উপকরণসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র।

রমজানের দুপুরে মেলায় প্রত্যাশিত ভিড় না পাওয়া গেলেও, যারা মেলায় এসেছেন তাদের চোখেমুখে দেখা গেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড় বাড়ার প্রত্যাশা স্টল বসানো ব্যবসায়ীদের। 

বাঙালির নানা গল্পে আঁকা নকশিকাঁথার পসরা সাজিয়ে মেলায় একটি স্টলে বসে ছিলেন কারুশিল্পী হোসনে আরা। তিনি বলেন, 'প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছরই মেলায় স্টল দিয়ে থাকি।'

প্রতি বছর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও, গত ২ বছর মেলায় স্টল না দিতে পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। তবে তারপরই আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, 'অনেকদিন পরে আবারও একাডেমি প্রাঙ্গণে বসতে পেরে অনেক খুশি।'

বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি শিশুদের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিতে আয়োজন করা হয়েছে, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খেলনা সামগ্রীর। মেলার প্রথমদিনে আজ বৃহস্পতিবার শিশুদের পাশাপাশি সেখানে ভিড় জমাতে দেখা গেছে বড়দেরও।

ছবি: স্টার

এমনি একজন, শুভ্র আহমেদ। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মেলায়।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সন্তানদের সঙ্গে নাগরদোলায় চড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, যেন বহুকাল পরে আবারও সেই শৈশবে ফিরে গেছি। অনেকদিন পর বাঙালির প্রাণের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন বৈশাখী মেলায় আসতে পেরে ভালো লাগছে।'

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এই মেলার উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, 'ঐতিহ্যবাহী এই বৈশাখী মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা বাঙালি। কারুপণ্যের এই মেলায় আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে যেমন তুলে ধরছি, তেমনিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও আমরা গ্রাম থেকে শহরে ব্যাপ্তি ঘটিয়েছি।'

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, 'কুটির শিল্পের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকেন, তারা সামান্য পুঁজি দিয়ে যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন, তাদের নিয়ে এই মেলা। এ দেশের মানুষের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির রুচিবোধটাকে কীভাবে পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, সেজন্য আমরা প্রতি বছর এ ধরনের মেলার আয়োজন করে থাকি।'

দুই বছর পর আবারও বৈশাখী মেলা হচ্ছে। এই মেলার বৈশিষ্ট্য হলো ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য ধারণ করে সম্পৃক্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেটাই করে যাচ্ছে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর ও বিসিক-এর চেয়ারম্যান মু. মাহবুবর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

6h ago