আজও চলছে তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ কাজ

গত ২৫ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে তেঁতুলতলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজ চলছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও এলাকাবাসী মাঠ রক্ষায় আন্দোলন করছেন। তাদের পেছনে পুলিশ বসে আছেন।

পরিবেশবাদী সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিশুদের দাবি উপেক্ষা করে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে তেঁতুলতলা খেলার মাঠের থানা নির্মাণে কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান জানান, গত রোববার শুরু হওয়া নির্মাণ চলে সোমবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত চলে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আবারও কাজ শুরু হয়।

তিনি বলেন, নির্মাণাধীন স্থাপনার কাছে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত আছেন। কাজ করছেন ১০ শ্রমিক। অনেক শিশু অসহায় দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে ছিল। কেউ কেউ কাজ বন্ধ করতেও অনুরোধ করে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সচিব ইকবাল হাবিব বলেন, 'আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করবো।'

গতকাল তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ঈদ বস্ত্র বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, 'আমি এ ব্যাপারে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের বিকল্প খুঁজতে বলেছি এবং এ বিষয়ে পরে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

কিন্তু মাঠ রক্ষায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বলেছেন এটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তারপরও নির্মাণকাজ চলার অর্থ হলো সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক না। যদি তারা আলোচনা করতে চান, তাহলে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে একটি ঈদগাহকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া এ দেশের মানুষের প্রথাগত চর্চার ওপরে চপেটাঘাত।

গত সোমবার ঢাকার তেঁতুলতলা খেলার মাঠ রক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে মোহাম্মদ ঈসা আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় কলাবাগান থানা পুলিশ। বিক্ষোভের মুখে ১৩ ঘণ্টা পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন।

পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণকাজ চলাকালে ফেসবুক লাইভে গেলে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক রত্না ও তার ছেলেকে সকাল ১১টার দিকে আটক করা হয়।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার জেলা প্রশাসক মাঠটি ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে কলাবাগান থানা নির্মাণে জন্য হস্তান্তর করে। বর্তমানে ৩০ নর্থ রোডে ভাড়া নেওয়া ভবনে থানার কার্যক্রম চলছে।

বছরের পর বছর ধরে তেঁতুলতলা খেলার মাঠ একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঈদগাহ এবং নামাজে জানাজা পড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত থানার জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ থেকে কিছু দূরে কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ রয়েছে। জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার শূন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর সব বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি জরিপ অনুযায়ী, সরকারি সম্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন।

জনস্বার্থে সরকার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য দেশের প্রচলিত সব আইন মেনে বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তির বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

14h ago