জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো মতেই দায়ী নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো মতেই দায়ী নয়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সেনারগাঁওয়ের বলরুমে আয়োজিত বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান-২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স: 'বাস্তবায়নে সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা' শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন একটি ভৌগলিক অবস্থান প্রতি নিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে চলতে হয়। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড় ধস—প্রতি নিয়ত আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত দুর্যোগ মোকাবিলা নীতিমালা আমরা অনুসরণ করে চলি। কিন্তু আমাদের নদী-মাতৃক দেশ, আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে প্রায় ৭০০ নদী আছে। তাছাড়া আমাদের জলাভূমি আছে। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপ আমাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

সব থেকে বড় কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো মতেই দায়ী নয়। কিন্তু বাংলাদেশকে এ আঘাতটা সহ্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রটা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছু স্বল্প মেয়াদি, কিছু মধ্য মেয়াদি ও কিছু দীর্ঘ মেয়াদি। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে যাতে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য না, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ যেন টেকসই হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পারি—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজে যখন কপ-১৫ এ যোগ দেই, তারপর ফিরে এসেই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ডেলটা প্ল্যান আমরা এই কারণে নিয়েছি, যাতে শত বছরে বাংলাদেশ টেকসই হয়। আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে, আরও উন্নত হবে। জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের জনসংখ্যাকে বাঁচানো, পাশাপাশি তাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান—মৌলিক চাহিদাগুলো যেন আমরা পূরণ করতে পারি সে বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য পুষ্টির নিশ্চয়তা একান্তভাবে অপরিহার্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু আমাদের ভৌগলিক সীমা রেখা বৃদ্ধি পাবে না। সেটা মাথায় রেখে আমরা গবেষণা করছি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য চাহিদা পূরণ, সুপেয় পানি-স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং তা বাস্তবায়নও করে যাচ্ছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বন্ধুপ্রতীম দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা একটি তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক টেকনো ইকোনমিক মহাপরিকল্পনা পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণ একান্তভাবে অপরিহার্য।

বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। একদিকে প্রকৃতি দুর্যোগ, অপরদিকে করোনাভাইরাসের আঘাত, এদিকে আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। যার ফলাফল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এর মধ্যেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমরা নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি এবং প্রণোদনা দিয়েই আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। জিপিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও উন্নত হবে। এমডিজি যেমন আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছিলাম, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, আজকের কনফারেন্সে কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, কী কী চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে, কীভাবে বাস্তবায়ন করলে আমরা সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারবো সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমি আশা করি, এর মধ্য দিয়ে আমাদের ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হবে। আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবো এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

Comments

The Daily Star  | English
Graft allegations against Benazir Ahmed

Interpol issues red notice against ex-IGP Benazir

Authorities have so far submitted red notices requests against 12 individuals, including several high-ranking officials of the AL regime

46m ago