কিশোরীদের শেল্টার হোমগুলোর করুণ দশা: সংসদীয় কমিটি

ছবি: বাসস

সহিংসতার শিকার কিশোরীদের সরকারি শেল্টার হোমগুলো (নিরাপদ আবাসন) জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। লোকবল স্বল্পতার কারণে সেগুলো যথাযথ সেবা দিতে পারছে না। এর কোনোটিতে নেই গার্ড, কোনোটিতে নেই বাবুর্চি। হোমগুলোতে মানসিক প্রতিবন্ধীদের রাখার কারণে সাধারণ নিবাসীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় কিশোরীদের সরকারি শেল্টার হোমের এই চিত্র উঠে এসেছে।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শেল্টার হোমগুলোর করুণ দশার কথা উল্লেখ করেন। 

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ সহিংসতার শিকার কিশোরীদের শেল্টার হোমগুলো সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এ ছাড়া কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে দেশে ৬টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র (শেল্টার হোম) রয়েছে। এগুলো ময়মনসিংহের ত্রিশাল; নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল; ঢাকার মিরপুর; মানিকগঞ্জের বেথিলা; গাজীপুরের পুবাইল ও কাশিমপুরে অবস্থিত।

বৈঠকের কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগের বৈঠকে শেল্টার হোম সম্পর্কে সমাজকল্যাণ সচিব জানান, ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত ৬টি কেন্দ্রে অনুমোদিত আসনের চেয়ে বেশি নিবাসী রয়েছেন। লোকবলের স্বল্পতা ও ভবনের জরাজীর্ণতার জন্য সেখানে নিবাসীদের যথাযথ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

বৈঠকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৈরি শেল্টার হোমগুলো বর্তমানে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সেখানে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া সেখানে মানসিক রোগীকে রাখার কারণে সাধারণ নিবাসীদের বসবাসে সমস্যা হচ্ছে। সংস্কার করে আবাসন কেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানো জরুরি।'

প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, 'সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেশিরভাগ শেল্টার হোম পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর কোনটিতে গার্ড নেই, কোনটিতে নেই বাবুর্চি। সাধারণ নিবাসীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ও মানসিক রোগীদের রাখার হচ্ছে, যা খুবই করুণ দৃশ্য।'

এসব শেল্টার হোমের যাবতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন তার বক্তব্যে বলেন, 'সম্প্রতি দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের পরিবারে নারীরা আত্মীয়স্বজন দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। চাকরিজীবী নারীদের প্রতিও সহিংসতার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।'

এ সময়ে তিনি জরাজীর্ণ শেল্টার-সেফ হোমগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে এর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেন।

বৈঠকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ হাজার হিজড়া রয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণ সুবিধা পেয়েছেন। শুধু ৫০ বা তার বেশি বয়সের হিজড়াদের মাসে ৬০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।'

কমিটির সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা বলেন, 'হিজড়াদের সরকারিভাবে এত সুযোগ সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও প্রায়ই রাস্তাঘাট, বাস ও ফেরিতে তাদের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ। হিজড়ারা জানিয়েছেন, তারা সরকারিভাবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ কিংবা আর্থিক কোনো সহায়তাই পাচ্ছে না। তাহলে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া হিজড়াদের এসব কর্মসূচি কোথায় নেওয়া হচ্ছে? হিজড়াদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার সঙ্গে মূলধারায় রাখতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।'

সমামজল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'প্রায়ই হিজড়া সেজে নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ সৃষ্টির কথা শোনা যাচ্ছে। পরিবারকে মোটিভেট করা গেলে হয়তো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়াদের চিহ্নিত করে ভাতা প্রদানের বয়সসীমা কমিয়ে আনার কথা বলেন।'

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- কমিটি ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়া চিহ্নিত করে আইডি কার্ড প্রদান ও হিজড়াদের উপদ্রব প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রদত্ত জমিতে মাঠ নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, সরওয়ার জাহান, আরমা দত্ত ও শবনম জাহান অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান বৈঠকে অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
NBR Protests

NBR officials again announce pen-down strike

This time, they will observe the strike for three hours beginning at 9 am on June 23

1h ago