অননুমোদিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে দরকার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা

ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ করেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করেছে, কিন্তু লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো আছে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অনিবন্ধিত হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই সরকারি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। তারা জনসাধারণের কাছে সমালোচনামূলক সেবা সরবরাহ করে। অপ্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে অসজ্জিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া গুরুতর প্রতিক্রিয়ার কারণ। চলতি মাসের শুরুর দিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার স্থানীয় একটি অননুমোদিত হাসপাতালে ২৫ বছর বয়সী শিউলি বেগম ও তার অনাগত সন্তানের মৃত্যু হয়। সেখানে একজন অনিবন্ধিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। জানা গেছে, অননুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তটি অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) একটি সুপারিশ অনুসরণ করে নেওয়া হয়েছে।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো যে জরুরিতার সঙ্গে পরিচালনা করা আবশ্যক তা সত্ত্বেও এ জাতীয় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধে মাত্র ৭২ ঘণ্টার সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের তীব্র প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক হতে পারি না। এটা কী আদৌ বাস্তবসম্মত, যখন সরকারের কাছে বাংলাদেশের অনিবন্ধিত সব প্রতিষ্ঠানের তালিকাও নেই? তারা কি তাদের নির্দেশাবলী অনুসরণের ক্ষমতা রাখে? যদি তাই হয় তাহলে কেন তারা ২০১৮ সাল থেকে ৫ হাজারের বেশি অনিবন্ধিত হাসপাতাল এবং ক্লিনিক পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে, যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করেছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২০ সালের আগস্টে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলোকে ওই বছরের ২৩ আগস্টের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন করতে অনুরূপ একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল, অনিবন্ধিতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে যদি থেকে থাকে তাহলে কী কী বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? এই নিষ্ক্রিয়তার জবাব কে দেবে?

দুর্ভাগ্যবশত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ ধরনের তাড়াহুড়ো এবং অপরিকল্পিত প্রতিক্রিয়াগুলো যা করে তা হলো আন্ডারহ্যান্ডেড লেনদেনের উপযুক্ত শর্ত তৈরি করা। বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, নিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত সব মানদণ্ড পূরণ করা অসম্ভব না হলেও কঠিন এবং কেবল ঘুষ প্রদানের মাধ্যমেই সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেতে পারে। সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করা সত্ত্বেও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল অনৈতিক উপায়ে নিবন্ধিত হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম সিস্টেমের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। আমরা দুঃখিত যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই সমস্যাটির একটি অংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার দায়িত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না কারণ এটি স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ন্ত্রণে আনাতে প্রেসক্রিপশন সরবরাহের চেষ্টা করে। আমরা কীভাবে এটিকে প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য বিশ্বাস করতে পারি, যখন এটি ধারাবাহিকভাবে তার নিজস্ব বিভাগের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত বিষয়গুলোকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে? অধিদপ্তর যদি সত্যিই এই খাতে কিছু নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে অবশ্যই একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নিয়ে আসতে হবে এবং সব হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিবন্ধন এবং নিয়মিত নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করতে হবে। এটিকে অবশ্যই তার নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে, সম্মতি নিশ্চিত করতে হবে এবং কার্যক্রমের সকল স্তরের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

2h ago