‘নিচের তলার মানুষদের করের আওতায় রাখা হাস্যকর’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

লাখ লাখ উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের কর ফাঁকি রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সমাজের নিচের তলার মানুষদের কাগেজে-কলমে করের আওতায় রাখা 'কিছুটা হাস্যকর' বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

একইসঙ্গে আয়করের হার নির্ধারণ করতে প্রথম কত টাকা পর্যন্ত করের হার শূন্য ধরা হবে, আর সর্বনিম্ন কত আয় হলে আয়করের আওতায় আসবে- এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

শুক্রবার মধ্যরাতে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে করা এক ফেসবুক পোস্টে এই অভিমত জানান ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা এই অর্থনীতিবিদ।

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটির মতো, যার অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছে না। কর ফাঁকি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ করযোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। এই সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, 'সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেট নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও মতামত ভাল করে দেখার সুযোগ হয় নি। তবে একটি বিষয় চোখে পড়ায় তা নিয়ে ভাবছিলাম। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম এত বাড়লেও করমুক্ত সর্বনিম্ন আয় বার্ষিক তিন লাখ টাকাতেই অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।'

এ পর্যায়ে তার নিজের গাড়ি চালকের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন,  'আমার ড্রাইভার, যে বাচ্চা বয়স থেকেই আমার বাসায় থেকে পড়ালেখা করেছে, সে এখন স্ত্রী এবং একটি নবজাত সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় সংসার চালাচ্ছে। জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে দেখে গতকালই তার সংসার খরচের হিসাব নিলাম। দেখলাম যে বাসা ভাড়া, স্ত্রী ও বাচ্চার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ বাদ দিলে তার বেতন দিয়ে ন্যূনতম খাবার খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব। সেই হিসাব অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তার বেতন বাড়িয়ে দিলাম। মুশকিল হল এখন যে সে আয় করের আওতায় এসে গেছে, তা তার মাথায় ঢুকছে না। আমার আয়করের রিটার্ন উকিলের অফিসে পৌঁছে দেবার বাইরে বেচারার আয়কর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নাই।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপকের পর্যবেক্ষণ, 'মজার ব্যাপার হলো বাজেট প্রস্তাবের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে বেতনভোগী কর্মচারি-কর্মকর্তাদের বেতনের অতিরিক্ত যাতায়াত, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি বাবদ মোট ভাতার করমুক্ত পরিমান সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।'

এমতাবস্থায় তিনি তার পোস্টে বলেন, 'ভাবছি আমার ড্রাইভারকে বলব একজন আয়কর উকিলের পরামর্শ নিতে কী করে আমার কাছ থেকে একটা নিয়োগ পত্র নিতে পারে যাতে ওই সব করমুক্ত ভাতা দেখিয়ে সে আয়করের আওতার বাইরে থাকতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tk 3 lakh recovered from a flat used by Riyad

Riyad and four other people were arrested on extortion charges in the residence of former Awami League lawmaker Shammi Ahmed on Friday

1h ago