পণ্যে শুল্প-কর বাড়ানো ও শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি

ডিসিসিআই
ডিসিসিআইর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

আজ শনিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে সংগঠনটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় মুহূর্ত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মূল কারণ হলো—সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাসহ উচ্চ সুদহার। তা ছাড়া বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির ১১টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাসকীন আহমেদ।

তিনি জানান, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্ক হার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রভৃতি কারণে দেশের বেসরকারিখাত এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এ বছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তোরকালে তিনি বলেন, সিএসএমই খাতে ঋণপ্রাপ্তি হলেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়, এটি বাড়াতে হবে এবং এই খাতের উদ্যোক্তারা যেন সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ পায়, তা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমাদের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।

অর্ন্তবর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে তাসকীন আহমেদ বলেন, সরকার দ্রুত এ সংস্কার কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, বেসরকারিখাতের পক্ষ থেকে আমরা সেই প্রত্যাশা করছি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আশাবাদী হবেন এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নীতির ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন, সেক্ষেত্রে হঠাৎ মাঝপথে কর কিংবা শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মোটেই কাম্য নয়। ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।

এলডিসি উত্তরণ প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিলাম। তবে কোডিভ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা পরবর্তী পট-পরিবর্তনসহ আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের ফলে এলডিসি উত্তরণ মোকাবিলার প্রস্তুতি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা কতটা প্রস্তুত, তা নির্ধারণে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। বিষয়টি যদি পেছানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এলডিসি উত্তরণে আরও কিছুটা সময় নিতে পারে এবং এ লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। তবে মনে রাখতে হবে ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি উত্তরণ হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এমনিতেই আমাদের জিডিপিতে করের অবদান বেশ কম। এরূপ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধনের কোনো বিকল্প নেই বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন এবং সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করা এবং এডিপি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার পাশাপাশি সময়মতো প্রকল্প সমাপ্তিতে নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia returns home from London

Khaleda Zia, accompanied by her two daughters-in-law Zubaida Rahman and Syeda Sharmila Rahman, is now on way to her Gulshan residence

2h ago