আবাসিক হলে ‘নৈরাজ্য’র প্রতিবাদে রাবি শিক্ষকদের মানববন্ধন

রাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য, আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি, নিপীড়ন ও শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

কর্মসূচি চলাকালে তারা 'আবাসিক হলগুলো দখল মুক্ত করতে হবে', 'সিট বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্ত করো', 'নিয়ম মেনে শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা নিশ্চিত করো', 'সংকট সমাধানে রাকসু নির্বাচন চাই' ইত্যাদি স্লোগানযুক্ত প্লাকার্ড হাতে তাদের দাবি তুলে ধরেন।

সেসময় ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, তিনি নিজেই একজন ভুক্তভোগী।

বৈধ সিট পাওয়ার ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি হলে উঠতে পারেননি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বৈধ সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে।'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান না করলে, আরও দৃঢ় আন্দোলন গড়ে তোলাসহ সব হল ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী রাবি আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য আজ ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। যার ফল আমরা ভোগ করছি।

'যার ফলাফল হলো অবস্থান না করেও হলের ভাড়া দিতে হচ্ছে তাদের। কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠলেও তাদেরকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সত্য তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিকদেরও মারধর ও নির্যাতন শিকার হতে হয়েছে', বলেন তিনি।

যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বণ্টনের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'অন্যথায় ছাত্র-শিক্ষকের আন্দোলন আরও ভয়াবহ হবে।'

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মামুন হায়দার বলেন, 'শুধু আবাসিকতা সংক্রান্ত সমস্যার কথা বললে হবে না।
শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ে কী খায়, প্রশাসন কখনো খোঁজ নেয়নি। বিশেষ বিশেষ লোকের জন্য বিশেষ বিশেষ রান্না হয় সেখানে। প্রভোস্টদের প্রত্যেক বেলা ডাইনিংয়ে খাওয়া উচিত। যখন প্রভোস্টরা হলে খেতে যান, তখন খাবারের মান পাল্টে যায়। বাংলাদেশ ছাড়া এমন নিকৃষ্টতম কাজ আর অন্য কোনো দেশে হয় কি না, আমার জানা নেই।'

দেশের শিক্ষার মান দিন দিন খুবই নিম্ন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে কাজী মামুন হায়দার বলেন, 'দীর্ঘ ২০ বছর ধরে একই জিনিস পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে কথা বললে নম্বর কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সেই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং নিয়ে কথা বলা অবান্তর।'

মানববন্ধনে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অধিকাংশ বৈধ শিক্ষার্থীরা সিট পাচ্ছে না। আবার যারা পাচ্ছে, তাদের বড় অঙ্কেও চাঁদা দিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ৫০ জন প্রতিবাদী শিক্ষক থাকত, তাহলে মনে হয় কেউ এসব অনিয়ম করে পার পেত না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। যেখানে শিক্ষক নিয়োগ হয় আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক বিবেচনায়, সেখানে কিসের র‍্যাংকিং? চেতনার কথা বলে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে, যা মূলত চেতনারই অবমাননা।'

মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্ল্যা, সাংবাদিক জামাল কাদরী, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান প্রমুখ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Police: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

8h ago