থ্রিডি প্রিন্টেড কান প্রতিস্থাপন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরবর্তী বিপ্লব

ছবি: সংগৃহীত

কোনো বস্তুর হুবহু প্রতিলিপি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি। যার শুরুটা ১৯৮০'র দশকে হলেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও।

থ্রিডি প্রিন্টিং বা মুদ্রণের ক্ষেত্রে যে বস্তুর প্রতিলিপি তৈরি করা হবে প্রথমে তার একটা ডিজিটাল ছাঁচ অথবা প্রতিচিত্র তৈরি করে নেওয়া হয়। এরপর সেই ছাঁচকে উপযুক্ত উপাদানে স্তরে স্তরে মুদ্রণ করা হয়। এতে সেই বস্তুর অবিকল আরেকটা প্রতিলিপি পাওয়া যায়। 

স্বাস্থ্য খাতে থ্রি-ডি প্রযুক্তির ব্যবহার 

স্বাস্থ্যখাতে তুলনামূলকভাবে নতুন ৪টি ক্ষেত্রে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- টিস্যু এবং অর্গানয়েডস (ক্ষুদ্র, স্ব-সংগঠিত, ত্রি-মাত্রিক টিস্যু কালচার যাকে অঙ্গের অনেক জটিলতার অনুলিপি তৈরির কাজে নিয়োজিত করা যায়); অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি; রোগী-নির্ভর অস্ত্রোপচারের নকশা এবং চাহিদা অনুযায়ী কৃত্রিম অঙ্গ তৈরির কাজে।   

প্রতিস্থাপনের আগে ও পরে । ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সাফল্য ও সফলভাবে কৃত্রিম কান প্রতিস্থাপন

সাম্প্রতিক সময়ে এসব প্রযুক্তিতে বিশাল এক সাফল্যের দেখা মিলেছে। প্রথমবারের মতো থ্রিডি মুদ্রণে তৈরি কান সফলভাবে একজন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। 

নিউইয়র্কভিত্তিক থ্রিডি বায়ো থেরাপিউটিক্স নামের একটা ওষুধ কোম্পানির হাত ধরে এসেছে এই সফলতা। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সজিব ইমপ্ল্যান্টস তৈরির কাজ করে আসছে। যে ইমপ্ল্যান্টসগুলোকে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রূপ দেওয়া হয়। 

এপিবোনও এরকম আরেকটা কোম্পানি, যারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করে রোগীর নিজস্ব স্টেম সেল থেকে। এদিকে থ্রি-ডি বায়ো কোম্পানি কাজ করে প্রধানত টিস্যু এবং তরুণাস্থি নিয়ে। তারা শরীরের বহিঃস্থ অঙ্গ যেমন- নাক, কান তৈরি করতে পারে; এর সঙ্গে মেরুদণ্ড ও গ্রন্থির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও তৈরি করতে সক্ষম তারা। 

মাইক্রোশিয়া ও কৃত্রিম কানের প্রয়োজনীয়তা 

নতুন কানের দরকার পড়া যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে খুব একটা নিয়মিত ঘটনা, তেমনটা নয়। কিন্তু মাইক্রোশিয়া নামে জন্মগতভাবে এক ধরনের বিকলাঙ্গতার কারণে কারও দুই কান বা যেকোনো একটি কানের বাইরের অংশ ক্ষুদ্রাকৃতির হতে পারে। এর ফলে কানের পূর্ণাঙ্গ গঠনের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দেখা যায়। অথবা কারও কান নাও থাকতে পারে। এ অবস্থাকে বলা হয় অ্যানোশিয়া। 

এক হিসাবে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এ ধরনের বিকলাঙ্গতা নিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিশু জন্ম নেয়। 

মাইক্রোশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যে নিশ্চিতভাবেই বধির হবে, তেমনটা না। কারণ মাইক্রোশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের অভ্যন্তরীণ কানকে দেখা যায় অনাক্রান্ত থাকতে। তাই সমস্যাটা অনেক সময় আলঙ্কারিক। আবার ৪ থেকে ১০ বছর বয়সের ভেতর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেও এসব বিকলাঙ্গতার সমাধান করা যায়। যদিও সেই পন্থা বেশ ব্যয়বহুল এবং অস্ত্রোপচারের পর মাইক্রোশিয়ায় আক্রান্ত কান যে ভালো থাকা কানের সম আকৃতির হবে- তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া ও এর ভবিষ্যৎ

যার শরীরে কৃত্রিম কান প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল সেই তরুণীর বয়স এখন ২০। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলায় তার কানের বিকলাঙ্গতার কারণে তেমন কিছু মনে হয়নি কিন্তু কিশোরী বয়সে পা দেওয়ার পর থেকে বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুলেতে শুরু করে। 

চলতি বছরের মার্চ মাসে তার কান প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। দুই মাস পেরিয়ে ৩ মাসে এসে তার দেহে প্রতিস্থাপিত কৃত্রিম কানকে দেখা গেছে তার শরীরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে।  

প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার শুরুতে চিকিৎসক দল তার সুস্থ কানের থ্রিডি স্ক্যান করে নেন, যাতে ত্রি-মাত্রিক মুদ্রণের কানটি সুস্থ কানের আকার, আকৃতির অনুরূপ হয়। 

পরবর্তীতে, গবেষক দল তৈরি করেন তার কানের তরুণাস্থি কোষে পূর্ণ কোলাজেন হাইড্রোজেল স্ক্যাফোল্ড, অর্থাৎ ত্রি-মাত্রিক ছিদ্রযুক্ত কোলাজেনের জালিকা সাদৃশ এক গঠন। যা দিয়ে কোষের বিস্তার ও পুনরূৎপাদনের মতো প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন হতে পারে। ফলে যখন এই গঠনকে কোনো ক্ষতে প্রতিস্থাপন করা হয় তখন সেটির নতুন, সতেজ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর সঙ্গে জুড়ে যায়। 

এ ধরনের প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় থেরাপিউটিক গ্রেডের বায়ো-ইংক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা সজীব কোষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করে সাময়িকভাবে কাঠামোগত এক অবলম্বন হিসেবে কাজ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত না কানের সজিব তরুণাস্থি নিজের ভার নিজে বহন করার মতো শক্তিশালী হয়। 

থ্রিডি বায়ো থেরাপিউটিক্স কোম্পানির ভাষ্যমতে, প্রতিস্থাপিত কানটি সময়ের সঙ্গে তরুণাস্থি টিস্যু পুনরুৎপাদন করতে থাকবে, ফলে একে দেখতে এবং স্পর্শ করলে প্রাকৃতিক কানের মতোই মনে হবে। 

এ ধরনের সফল প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার পর থ্রিডি বায়ো থেরাপিউটিক্স কোম্পানি পরবর্তী উদ্যোগ হিসেবে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রের লাম্পেক্টমি পুনর্গঠনের মতো জটিল অন্যান্য সমস্যা নিরসনে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিয়েল কোহেন। 

 

তথ্যসূত্র: 

সিঙ্গুলারিটিহাব.কম, মেডিকেলডিভাইস-নেটওয়ার্ক
 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus leaves for UK on four-day official visit

The two countries are working to renew their bilateral ties, with an increased focus on economic cooperation, trade and investment

1h ago