আইম্যাক্স অভিজ্ঞতা: বঞ্চিত বাংলাদেশের দর্শক

আইম্যাক্স থিয়েটারে ছবি উপভোগ করছেন দর্শকরা। ছবি: সংগৃহীত
আইম্যাক্স থিয়েটারে ছবি উপভোগ করছেন দর্শকরা। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষায়িত ক্যামেরা, ফিল্ম রোল, থিয়েটার আর প্রজেক্টরের সমন্বয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের সিনেমা নির্মাণ প্রযুক্তির নাম আইম্যাক্স– যা কিনা 'ম্যাক্সিমাম ইমেজ' এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

ভক্তরা বলেন, আইম্যাক্সের নানা অভিনব ফিচার মিলেমিশে সিনেমা দেখার এক অপার্থিব ও অসামান্য অনুভূতি এনে দেয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন থিয়েটারে প্রচলিত ফিল্ম স্ক্রিনের তুলনায় আইম্যাক্স স্ক্রিনে ২৬ শতাংশ বেশি 'ভিউয়িং স্পেস' বা দৃশ্যমান পর্দা থাকে, যার ফলে সিনেমা উপভোগের মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও আইম্যাক্স থিয়েটারগুলো ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে ডুয়াল প্রজেক্টর কাজে লাগায়। পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের ভাষায় যা কিনা পর্দা 'অদৃশ্য হয়ে যাওয়া'।

আইম্যাক্স ফিল্ম রোল ৩৫ মিলিমিটার ও ৭০ মিলিমিটার ফরম্যাটে পাওয়া যায়। ৭০ মিলিমিটারের সংস্করণটি ইমেজিং ফরম্যাটে যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃত, কেননা এটির দক্ষতা হালের ডিজিটাল ইমেজিং সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়। এতে রয়েছে ১.৪৩ : ১ অ্যাসপেক্ট রেশিও সমৃদ্ধ কালার প্যালেট।

তবে আইম্যাক্স থিয়েটারে সিনেমা দেখার চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা নির্ভর করে সেই সিনেমাটি শক্তিশালী আইম্যাক্স ফিল্ম ক্যামেরা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে কী না, তার ওপর। এটি সেকেন্ডে ১৫টি ফ্রেম পরিচালনা করতে সক্ষম। তবে এতে এত বেশি শব্দ হয় যে পরিচালকরা প্রায়ই এই ক্যামেরা ব্যবহার করে সংলাপ রেকর্ডের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ক্রিস্টোফার নোলানের 'ওপেনহাইমার' সম্প্রতি আইম্যাক্স সিনেমাটোগ্রাফির প্রতি মানুষের আগ্রহ আবারো ফিরিয়ে এনেছে। যদিও ৭০ এর দশক থেকেই আইম্যাক্স সিনেমার আবির্ভাব ঘটে, নোলানই এই প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি বাজিমাৎ করতে পেরেছেন বলে ধারণা করা হয়। সবসময়ই তিনি অ্যানালগ ফিল্মমেকিংয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং 'দ্য ডার্ক নাইট', 'ইনসেপশন' ও 'ইন্টারস্টেলার' এর মতো হিট সিনেমার ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। তবে এক্ষেত্রে নোলান একাই নন; টম ক্রুজের 'মিশন ইমপসিবল: ঘোস্ট প্রোটোকল' থেকে শুরু করে জর্ডান পিলের 'নোপ' এর ক্ষেত্রেও আইম্যাক্স প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ঘটেছে। এ ধরনের সিনেমার জনপ্রিয়তা যত বেড়ে চলেছে, ততই চলচ্চিত্র নির্মাতারা আইম্যাক্সের সঙ্গে শ্যুটিংয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত সিনেমা হলগুলোতে এসে যদি এর সমৃদ্ধ ভিজ্যুয়াল আর সাউন্ড দুটোই হারিয়ে যায়, তবে আর লাভ কী?

ওপেনহেইমার ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
ওপেনহেইমার ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

উন্নত প্রযুক্তি হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আইম্যাক্সের কোনো উপস্থিতি নেই। দর্শকদের সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা যাতে নিখুঁত হয়, সে বিষয়ে পরিচালকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দর্শকরা এখনো সেই ডলবি সিনেমা থিয়েটারের মানদণ্ডেই আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন—আইম্যাক্সের মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা যেন সুদুর পরাহত। তবে এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। বাংলাদেশে আইম্যাক্সের প্রকৃত চাহিদা কি সত্যিই আছে, না এর চাহিদা খুবই ছোট একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ?

বাংলাদেশি সিনেমার দর্শকদের মধ্যে এ বিষয়ে খানিকটা মতভেদ দেখা যায়।

সালেহিন নিয়মিত হলে যেয়ে সিনেমা দেখেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ভারতে আইম্যাক্স থিয়েটারে "ইন্টারস্টেলার" দেখেছি এবং এটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে "ব্লেড রানার" দেখার অভিজ্ঞতা এর ধারেকাছেও নেই।'

আইম্যাক্সের চাহিদা কম না বেশি, সে বিষয়ে তিনি মত দেন, সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে আইম্যাক্সের উন্নত মান সম্পর্ক মানুষকে সচেতন করা। 'দেশে আইম্যাক্স চালু করে কার্যকরী বিপনণ চালানো হলে অনেকেই সিনেমা দেখার এই অসামান্য অভিজ্ঞতা নিতে চাইবে', যোগ করেন তিনি।

অপর সিনেমাপ্রেমী মুশফিকের ভাবনাটা অন্যরকম। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশি দর্শকরা আইম্যাক্স নিয়ে এখনো তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আইম্যাক্স ফরম্যাটের সিনেমার সংখ্যাও খুব বেশি না। যার ফলে "যা পাওয়া যায়" তা নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এ বিষয়ে বেশিরভাগ দর্শকই উদাসীন।'

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইম্যাক্স থিয়েটার। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইম্যাক্স থিয়েটার। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের মূল প্রতিষ্ঠান শো মোশন লিমিটেডের সঙ্গে কথা বলে ডেইলি স্টার। তারা জানান, এখনো বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি নিয়ে আসার উপযুক্ত সময় হয়নি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তারা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, যদি এখন নয়, তাহলে কবে? আইম্যাক্স প্রযুক্তি পৃথিবীতে আসার পর পেরিয়ে গেছে অর্ধ শতকেরও বেশি সময়।

বৈশ্বিক সিনেজগতের এই ধারার সুবর্ণ সুযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঞ্চিত হচ্ছেন দর্শকরা। অনেকে দেশের বাইরে যেয়ে আইম্যাক্স উপভোগ করছেন, যা দেশের অর্থনীতির ওপর সামান্য হলেও প্রভাব ফেলছে।

তবে আপাতত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা ছাড়া বা দেশের বাইরে যেয়ে আইম্যাক্স সিনেমা দেখা ছাড়া আর তেমন কোনো বিকল্প নেই দর্শকদের হাতে।

মূল লেখা: হাসান মাহমুদ আবদুল্লাহ

ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago