চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, যানবাহনে বাড়তি ভাড়া আদায়

নগরীর কাপাসগোলা এলাকা থেকে গত শুক্রবার তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এমনিতেই নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে গাড়ি চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, ডিসি রোডসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলে হাঁটু পানি জমে গেছে।

এ অবস্থায় ভাড়ায়চালিত বিভিন্ন যানবাহনে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

যারা রিকশা-অটোরিকশা ব্যবহার করছেন, তাদের ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে রোববার বাসে ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভিন আকতার। জলাবদ্ধতার কারণে গাড়িটি দুই নম্বর গেটে গিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। পরে তিনিসহ অন্য যাত্রীরা হেঁটে গন্তব্য যেতে বাধ্য হন।

পারভিন আকতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ষোলশহর স্টেশন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত হাঁটু পানি ছিল। পানিতে খাল আর রাস্তা একাকার হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে মুরাদপুর গিয়ে আরেকটা গাড়িতে উঠেছি। তারপর দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছি।'

দুই নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট যাচ্ছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুদ হাসান।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই রুটে নিয়মিত রিকশা ভাড়া ৪০ টাকা। আপনি জমায় রিকশা চালক ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করছে।'

স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজুর রহমান বলেন, 'গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশাতে করে যেতে হচ্ছে।'

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা যেন নিয়ম হয়ে গেছে বন্দরনগরীতে। বর্ষা এলেই দুর্ভোগ শুরু হয় নগরীর ৭০ লাখ বাসিন্দার।

জলাবদ্ধতার কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে আটকা পড়ে যানবাহন। সৃষ্টি হয় চরম যানজট। 

বিশেষ করে নগরের মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট বাদুরতলা, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও আগ্রাবাদ, হালিশহর, আকবরশাহ ও বাকলিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

বৃষ্টিতে আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের উপরও পানি জমে যায়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামে আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।'

সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীতে ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।

এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে 'চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন' প্রকল্পের অনুমোদন পায়। এটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

একই বছরের ২৫ এপ্রিল ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ 'কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ' প্রকল্পের অনুমোদন পায়। পরের বছর থেকে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্থাটি।

এছাড়াও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৯ সালে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড আরেকটি প্রকল্পের অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পে ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপনের পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীরে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা প্রতিরোধক দেওয়াল নির্মাণ করা হবে। সেটির কাজও চলমান আছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বিভিন্ন সময় খাল-নালা পরিষ্কারে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে।

Comments

The Daily Star  | English
health sector reform in Bangladesh

Health sector reform: 33 proposals set for implementation

The Health Ministry has selected 33 recommendations from the Health Sector Reform Commission as it seeks to begin implementing the much-needed reform process in the country’s health system.

16h ago