যে কারণে রাশিয়ার জন্য সেভেরোদোনেৎস্ক শহর দখল গুরুত্বপূর্ণ

যুদ্ধবিধ্বস্ত সেভেরোদোনেৎস্ক। ছবি: এএফপি

কয়েক সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পর পূর্ব ইউক্রেনের শহর সেভেরোদোনেৎস্ক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। গতকাল শনিবার শহরটির মেয়র ওলেকসান্ডার স্ট্রাইটুকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৌশলগত নানা কারণে এই শহরটির দখল নেওয়া রাশিয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত কয়েক মাস ধরে রুশ বাহিনী লুহানস্ক অঞ্চল পুরোপুরি দখলে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবশেষ বাধা হিসেবে যে ২টি শহর দাঁড়িয়ে ছিল, তারমধ্যে একটি সেভেরোদোনেৎস্ক।

সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক দখলের পর এখন কেবল লিসিচানস্ক শহর দখল করলেই লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার হাতে চলে আসবে।

সেভেরোদোনেৎস্কের দখল রাশিয়াকে পার্শ্ববর্তী শহর লিসিচানস্ক আক্রমণ করতে এবং লুহানস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে। আর লুহানস্ক অঞ্চল সম্পূর্ণ দখলে চলে আসলে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত পুরো ডনবাস অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যপূরণের দিকে আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে রাশিয়া।

ভার্জিনিয়া ভিত্তিক সিএনএ-এর রাশিয়া স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক মাইকেল কফম্যান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ডনবাস অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য রাশিয়ার যে কয়েকটি শহরে জয় দরকার, তারমধ্যে সেভেরোদোনেৎস্ক একটি। সেখান থেকে রুশ বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিমে দোনেৎস্কের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

তবে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোনেৎস্কের অন্তত দুই-পঞ্চমাংশ এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া, এ অঞ্চলটি অনেক বড় এবং আরও বেশি জনবহুল হওয়ায় এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হবে রাশিয়াকে।  

গত ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের আগেই ডনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।

তিনি ওই সময় বলেন, 'এমন সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি, দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।'

২০১৪ সালে গণআন্দোলনের মুখে ইউক্রেনে রাশিয়া-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোচের পতন হলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রজাতন্ত্রটির ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার যুক্তি, ১৯৫৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির আগে ক্রিমিয়া তৎকালীন রুশ প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল।

এরপর পুতিন নজর দেন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশভাষী দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ওপর। গত ৭ বছর ধরে এই অঞ্চল দুটি নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সংঘাত বিরাজ করছে।

মস্কোপন্থি বিদ্রোহীরা ক্রেমলিনের সহায়তায় দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ইউক্রেন থেকে মুক্ত ঘোষণা করে। এরপর থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের ক্রমাগত লড়াই চলছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English
Rice_market

Development is not just about macroeconomic progress

Do macroeconomic concepts reflect the realities on the ground?

12h ago