‘আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেটা গর্বের’

‘স্বামী হারানোর শোক তো সারাজীবনই থাকবে। তবে, আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, সেটা গর্বের। সেই গর্বে তাকে হারানোর বেদনা আড়াল করার চেষ্টা করি। কয়জনের কপালে এমন সম্মান জোটে?’
রবিউল করিম। ছবি: সংগৃহীত

'স্বামী হারানোর শোক তো সারাজীবনই থাকবে। তবে, আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, সেটা গর্বের। সেই গর্বে তাকে হারানোর বেদনা আড়াল করার চেষ্টা করি। কয়জনের কপালে এমন সম্মান জোটে?'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা।

স্বামী নিহত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে চাকরি পান সালমা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হওয়ায় ঢাকার ধামরাই উপজেলার দেপাশাই গ্রামে বাবা মো. শাজাহানের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকেন তিনি। মাঝেমাঝে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামেও যান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সময়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ছিলেন রবিউল করিম। দুই ভাইয়ের মধ্যে রবিউল ছিলেন বড়। ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস্ বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকের সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো এখনো যত্নে রেখেছেন স্মৃতির পাতায়৷

শামস্ বলেন, 'বছরের প্রতিটা ঈদের আগে ভাইয়াকে ভীষণভাবে মনে পড়ে। ঈদের ঠিক আগে ভাইয়া বাড়ি আসার সময় আমাকে কল দিতেন। আর বলতেন "কী রে বাড়ি যাবি না?" প্রায় সময়ে আমরা একসঙ্গেই বাড়ি আসতাম।'

রবিউলের বাবা বেঁচে নেই। মা করিমুন্নেছা কাটিগ্রামের বাড়িতেই থাকেন।

এই পরিবার ছাড়াও আরও একটি পরিবার আছে রবিউলের৷ বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস) নামে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য নিজের হাতেই তার গ্রামে গড়েছিলেন একটি স্কুল। স্কুলটি এখনো আছে, ৪৭ থেকে শিক্ষার্থী হয়েছে এখন ৬৯। কিন্তু নেই তাদের সেই অভিভাবক।

রিয়াদ হোসেন স্কুলটিতে পড়ছেন সেই ২০১১ সাল থেকে৷ রবিউল করিমের সঙ্গে তার রয়েছে অনেক স্মৃতি। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে রিয়াদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি তার রবিউল ভাইয়ের।

রবিউলের গড়া স্কুলের তত্ত্বাবধানে আছেন রাজীব আহমেদ। তিনি বলেন, 'রিয়াদকে মাঝে মাঝে রবিউল ভাইয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবির দিকে। তারপর কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ এসে বসে থাকে৷'

এভাবেই কাটতে থাকে গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিমের স্বজন ও কাছের মানুষগুলোর দিন।

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

11h ago