গানের জাদুকর আলম খান
বাংলা গানের অসামান্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান। দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময়ের সংগীতযাত্রায় অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। সিনেমার গানে সুরের জাদুকর বলা হয় তাকে।
আবদুল জব্বারের কণ্ঠে 'সারেং বৌ' সিনেমার 'ওরে নীল দরিয়া, এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে 'বড় ভালো লোক ছিল' সিনেমার 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস' কিংবা 'ভেজাচোখ' সিনেমায় এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে 'জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প' এই ৩ সিনেমার গানেই অমর হয়ে থাকবেন তিনি।
প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ২০১৮ সালে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় আলম খান সম্পর্কে বলেছিলেন, 'আমার মতো সাধারণ একজন শিল্পীকে রাজশাহী থেকে এনে যদি সুযোগ করে না দিতেন তাহলে আমি শিল্পীই হতে পারতাম না। ১৯৭৭ সালে আমাকে দিয়ে 'মেইল ট্রেন' সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। এরপর 'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী' সিনেমায় 'ধুম ধাড়াক্কা ধুম' গানটি করান, তারপর 'প্রতিজ্ঞা' সিনেমায় 'এক চোর যায় চলে' গানটি শ্রোতারা প্রথম শোনেন। তার সুরে 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস', 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'ভালোবেসে গেলাম শুধু', 'চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা', 'কারে বলে ভালোবাসা কারে বলে প্রেম', 'সবাই তো ভালোবাসা চায়', 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প', 'তুমি যেখানে আমি সেখানে', 'কী জাদু করিলা'সহ অনেক গান করেছি। তার কাছে আমার আজন্ম কৃতজ্ঞতা।'
সিনেমার গানে আলম খানের একক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে আবদুল জব্বার খান পরিচালিত 'কাঁচ কাটা হীরে' সিনেমার মাধ্যমে। তার আগে সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে সঙ্গীত পরিচালনা করতেন তিনি। সুরকার হিসেবে প্রথম আলোচনায় আসেন ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত 'সারেং বৌ' সিনেমায় অবিস্মরণীয় গান 'ও রে নীল দরিয়া' গানের মাধ্যম্যে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
আলম খানের সুরকরা শ্রোতাপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- 'ওরে নীল দরিয়া', 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই', 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা', 'তুমি যেখানে আমি সেখানে', 'সবাই তো ভালবাসা চায়', 'ভালবেসে গেলাম শুধু', 'চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা', 'আমি একদিন তোমায় না দেখিলে', 'তেল গেলে ফুরাইয়া', 'আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী', 'জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প', 'মনে বড় আশা ছিল', 'ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে', 'সবার জীবনে প্রেম আসে', 'বেলি ফুলের মালা পরে', 'কাল তো ছিলাম ভালো', 'চুমকি চলেছে একা পথে', 'ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া', 'তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো', 'বুকে আছে মন', 'আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটারে', 'তোরা দেখ দেখ রে চাহিয়া', 'কারে বলে ভালোবাসা', 'এখানে দুজনে নিরজনে'-সহ অনেকগান।
১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত 'বড় ভালো লোক ছিল' সিনেমার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আলম খান। এরপর তিনি 'তিন কন্যা' (১৯৮৫), 'সারেন্ডার' (১৯৮৭), 'দিনকাল (১৯৯২), 'বাঘের থাবা' (১৯৯৯) এবং 'এবাদত' (২০০৯) ছবিগুলোতে একই পুরস্কারে ভূষিত হন।
এ ছাড়া, শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে 'কি জাদু করিলা' ছবির জন্য ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
আলম খান ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছোট ভাই বিখ্যাত পপ গায়ক মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। ২০২২ সালের ৮ জুলাই থেমে গেল সুরের জাদুকর আলম খান।
Comments