রুশ আগ্রাসনের অবসান কামনায় প্রার্থনা ইউক্রেনের মুসলিমদের

ইউক্রেনের ইসলাম ধর্মীয় নেতা মুফতি সাইদ ইসমাহিলভের জন্ম ও বেড়ে উঠা পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কে। ১৩ বছর মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মুফতি শেখ সাইদ ইসমাহিলভের নেতৃত্বে পূর্ব ইউক্রেনের কোস্তিয়ানতিনিভকা শহরের মদিনা মসজিদে ঈদ-উল-আজহার নামাজ।ছবি:এপি

ইউক্রেনের ইসলাম ধর্মীয় নেতা মুফতি সাইদ ইসমাহিলভের জন্ম ও বেড়ে উঠা পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কে। ১৩ বছর মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

তবে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক দেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশের জন্য লড়তে ধর্মীয় দায়িত্ব থেকে সরে আসেন তিনি। স্থানীয় আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়নের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।

ইসমাহিলভ অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে আহতদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে নিয়োজিত প্যারামেডিকদের সামরিক গাড়ি চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানো এবং একইসঙ্গে গুরুতর আহতদের মানসিক সমর্থন দেওয়ার কঠিন কাজটি করতে শুরু করেন তিনি।  বিষয়টিকে তিনি স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই দেখেন।

ইসমাহিলভ কয়েক ডজন ইউক্রেনীয় মুসলিমদের মধ্যে একজন, যারা শনিবার ঈদ-উল-আজহার দিনে কোস্তিয়ানতিনিভকা শহরের মদিনা মসজিদে নামাজের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। মসজিদটি এখন ডনবাসে ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের একমাত্র মসজিদ, যেটি চালু আছে।

সংবাদসংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসমাহিলভ বলেন, এই অঞ্চলে মোট ৩০টি মসজিদ আছে, তবে বেশিরভাগই এখন রাশিয়ানদের দখলে।

ইউক্রেনের জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ মুসলিম। এরমধ্যে ক্রিমিয়াতে অনেক মুসলিম আছে। পূর্ব ইউক্রেনেও মুসলিম জনগোষ্ঠী আছে।

২০১৪ সালে রাশিয়ার আক্রমণে ক্রিমিয়া ও ডনবাস থেকে অনেক মুসলিম  ইউক্রেনের অন্যান্য অংশে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। এবারের হামলায় আবারও পালাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

কোস্তিয়ানতিনিভকার মসজিদটিতে যুদ্ধের আগে কয়েকশ স্থানীয় মুসলিম নামাজের জন্য আসতেন। কিন্তু শনিবার ঈদের দিন কেবল কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। ঈদের জামাতে মূলত অংশ নেন বিভিন্ন ইউনিটের সেনা  বা চিকিৎসকরা।

ঈদের নামাজের পর খুতবাতে ইসমাহিলভ বলেন, যুদ্ধের মধ্যে এই বছরের ঈদের একটি প্রতীকী তাৎপর্য আছে। রুশদের দখল করে নেওয়া অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে বলেন তিনি।

ওইসব অঞ্চলের অনেক মুসলিম তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মসজিদ গোলাবর্ষণে ধ্বংস হয়েছে।

'অনেক ভয় আছে। যুদ্ধ অব্যাহত আছে এবং আমাদের কোনো ধারণা নেই অধিকৃত অঞ্চলে কী ঘটছে এবং সেখানে মুসলিমরা কী অবস্থায় আছে', তিনি বলেন।

ইসমাহিলভ এপিকে আরও বলেন, চেচেন ব্যাটালিয়নসহ ইউক্রেন আক্রমণকারী রুশ মুসলিমরা মুসলিম হলেও তাদেরকে 'অপরাধী' হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি।

'তারা পাপ করছে এবং কোনো যুক্তি ছাড়াই খুনি ও দখলদার হিসেবে ইউক্রেনীয় এবং ইউক্রেনীয় মুসলিমদের আবাসস্থলে এসেছে।  আল্লাহ তাদের সেই অধিকার দেননি। তাদেরকে আল্লাহর সামনে এসবের জন্য জবাব দিতে হবে', যোগ করেন তিনি।

ওই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছিলেন ওলহা বাশেই নামের একজন আইনজীবীও।  তিনি এই যুদ্ধে প্যারামেডিক হিসেবে কাজ করছেন।

রাশিয়া পৃথিবী মথেকে ইউক্রেনকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি এপিকে বলেন, তার এই লড়াইকে তিনি 'জিহাদ' হিসেবে দেখছেন। যুদ্ধের সময় মানসিক শান্তি দিতে ইসলাম তাকে সাহায্য করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইসমাহিলভ বলেন, ঈদের নামাজে তারা যুদ্ধে ইউক্রেনের জয় এবং রাশিয়ার দখল করে নেওয়া অঞ্চলগুলোর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন।

'আমরা প্রার্থনা করি, আমাদের দেশের মুসলিমরা নিরাপদ থাকবেন, আমাদের পরিবারগুলো আবার একত্রিত হবে, নিহত মুসলমানরা বেহেশতে যাবেন এবং যেসব মুসলিম সেনারা তাদের দেশকে রক্ষা করছে তাদেরকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করবেন', তিনি বলেন।

Comments