এজন্যই তবে কালো টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া?

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা সৎ করদাতা তাদের থেকেও প্রায় ১৮ শতাংশ কম কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা সৎ করদাতা তাদের থেকেও প্রায় ১৮ শতাংশ কম কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

হাজারো সমালোচনার বাণ সহ্য করেও সরকার কেন এই সুযোগ দিলো? কেন সৎ করদাতাদের অসৎ হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করল? কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে সরকারের প্রভাবশালী কারও পাচারকৃত অর্থ বিদেশে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আর তাদেরকে রক্ষা করতেই রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অনৈতিক সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু তা জানা যায়নি।

তবে গত সপ্তাহে ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জো বাইডেন প্রশাসন দুর্নীতি দমনে একটি নতুন কৌশল নিয়েছে। তাতে দেশটির রিয়াল এস্টেট ও শেল কোম্পানিগুলোর সব লেনদেন তদন্ত করবে। একই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কানাডা ও পশ্চিমা অন্যান্য দেশগুলোও।

এই সংবাদের পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাংলাদেশ থেকে যারা এসব দেশে টাকা পাচার করেছেন তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। আর এসব দূর্নীতিবাজদের রক্ষা করতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া।

স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশ কেন দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতায় এ ধরনের নিন্দনীয় কাজ করবে। স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে এ ধরনের উদ্যোগ কতটা মানানসই? এমনিতেই যারা করদাতা, তাদের কষ্টের সীমা নেই। কারণ তারা যে কর দেন, তার কতটুকু সেবা হিসেবে ফেরত পান তা সবারই জানা। একজন করদাতা যখন কোনো কাজ করতে সরকারি অফিসে যান, হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে যান যে এ দেশের সেবা সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং প্রভাবশালীদের জন্য।

এ দেশ জনগণের নয়, এ দেশ ক্ষমতাবানদের। করের টাকায় সরকার যতটুকু অবকাঠামো নির্মাণ করেন, তারও বড় অংশ চলে যায় দুর্নীতির খাতায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজদেরকে টাকা পাচার করে সমস্যায় পড়লে সেখানেও ছাড় দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সৎ করদাতাদের সঙ্গে শুধু ঠাট্টাই নয়, নিষ্ঠুরতাও।

সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি ও দেশীয় অর্থনীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় পাচারকৃত টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাতে যদি কিছু বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত আসে বা সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে। কিন্তু আয় বাড়াতে গিয়ে অন্যায়কে মেনে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ফল কি আমাদের জন্য ভালো কিছু আনবে, নাকি তাতে আরও নতুন করে টাকা পাচার করতে মানুষকে উৎসাহিত করবে।

এখন যদি কেউ মনে করেন, তিনি ২৫ শতাংশ হারে কর না নিয়ে টাকা পাচার করে তা ফেরত আনবেন? তাতে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত কম কর দিতে হবে তাকে। তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে?

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব প্রত্যাশা করছে এই কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে। এটি কী আমাদের মোট রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা তার তুলনায় অনেক বেশি?

চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া এই সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কত টাকা রাজস্ব আদায় হলো তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো। টাকার জন্য সরকার দুর্নীতিবাজদের সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, নাকি সব ধরনের দূর্নীতির পথ বন্ধ করে সঠিক উপায়ে আয় বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেবে?

এদিকে পাচারকৃত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও কীভাবে টাকা পাচার রোধ করা যায় সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগের কথা বাজেটের সময় বলেনি সরকার।

সৎ করদাতাদের প্রত্যাশা, তাদের করের টাকা যেন অপচয় না হয়, দুর্নীতির কারণে তাদের টাকা যেন নয়-ছয় না হয়। ২০০ টাকা দামের বালিশ যেন ৪৫ হাজার টাকায় কেনার মতো জোচ্চুরির শিকার না হয় তাদের কষ্টার্জিত টাকা। করদাতারা চান সরকারের সব সেবা যেন সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করা হয়।

এগুলো নিয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই, কোনো আলাপ নেই। শুধু কর কীভাবে বাড়ানো যাবে সেই আলাপ। কীভাবে করের জাল বিস্তৃত করা যাবে সেই জায়গাতেও সরকারের গবেষণা কম। বরং যারা কর দেয় বছরের পর বছর ধরে তাদের উপরই করের ভার বাড়ানোর প্রচেষ্টা করছে সরকার।

করদাতাদেরকে যোগ্য মূল্যায়ন করুন। তাদের প্রাপ্য সেবা সঠিকভাবে প্রদান করুন। করদাতারা আরও উৎসাহিত হবেন কর দিতে। তরুণদের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ রয়েছে। তবে তাদেরকে নিরাশ করার মতো কোনো কাজ না করলে ধীরে ধীরে করদাতার সংখ্যা বাড়বে, সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

আহসান হাবীব: সিনিয়র রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Driest April in 43 years

Average rainfall in Bangladesh was one millimetre in April, which is the record lowest in the country since 1981

12h ago