মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত করার পরামর্শ পরিবহন নেতাদের

মোটরসাইকেল
ফাইল ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন খাতের নেতারা।

আজ বুধবার সচিবালয়ে টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে ২ শীর্ষ পরিবহন নেতা শাজাহান খান ও মসিউর রহমান রাঙ্গা মোটরসাইকেলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে তাদের প্রস্তাবের কথা সাংবাদিকদের জানান।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটির দেওয়া ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। আজকের বৈঠকটি ছিল টাস্কফোর্সের পঞ্চম বৈঠক।

প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা বলে মোটরসাইকেলের বিষয়ে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, ঈদের ভিড়ের সময় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক সপ্তাহের জন্য (৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত) মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত রাখা হয়।

এ ছাড়া, একটি সরকারি তদন্ত কমিটি সম্প্রতি জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। কারণ, চলতি বছরের ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে।

তবে অনেক মোটরসাইকেল চালক ও ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, বাস মালিকদের চাপে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারি পরিবহন সেবার অভাব ও বাস ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফেরার জন্য অনেকেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে বাধ্য হন। তবে বিপুল সংখ্যক এই মোটরসাইকেলের কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সড়ক নিরাপত্তা সংস্থা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) এ পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে এখনও অনেক অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়ে গেছে।

আজকের বৈঠকের পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল জড়িত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং ঈদের ভিড়ের সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং টাস্কফোর্সের সদস্য শাজাহান খান আরও বলেন, 'মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সার্ভিসও খুব বিপজ্জনক। আমরা যদি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করি, তাহলে প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে।'

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি বৈঠকে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অধীনে আন্তঃজেলা রুটে বাইক না চালানোর কথা বলেছেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালিত মোটরসাইকেলগুলোকে আলাদা করতে এগুলোকে আলাদা নম্বর প্লেট ও ​​লাইসেন্স দেওয়ার পক্ষে মত দেন।

তবে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অন্তত ৩ জন জানান, তারা মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সার্ভিস এবং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু মোটরসাইকেলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, বৈঠকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক যানবাহনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ এবং সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সেগুলো স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বাস ও ট্রাকের জন্য নির্ধারিত লাইফলাইন বিষয়ে জানাতে তাকে নথি দেখতে হবে বলে জানান সচিব।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আরেকজন বলেছেন, তারা বাসের জন্য ২০ বছর এবং ট্রাকের জন্য ২৫ বছর আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছেন। তবে বুয়েট বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার পর এবং স্ক্র্যাপিংয়ের জন্য নির্দেশিকা চূড়ান্ত করার পরে এটি চূড়ান্ত করা হবে।

জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের সদস্য ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহন নেতারা প্রায়ই বৈঠকে আধিপত্য বিস্তার করেন এবং তাদের ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, যেসব নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাকে এবং বুয়েটের ২ বিশেষজ্ঞকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু পরিবহন নেতাদের সশরীরে বৈঠকে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, অন্তত ৫ জন পরিবহন নেতা সশরীরে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠকে অবৈধ ড্রাইভিং স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আগে ডোপ টেস্টের জন্য কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোসহ আগের বৈঠকে নেওয়া একাধিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago