বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন

সরকারের 'স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ: ২০১৮-২০৩০'—এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর সম্ভাব্যতা যাচাই ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে।

এই একাডেমির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এমনকি অধ্যাপকদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্যও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার স্নাতক পর্যায়ের এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমিতে কী শেখানো হবে, কারা প্রশিক্ষণ দেবেন এবং এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হতে পারে—তা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের সঙ্গে।

ইউজিসি মনে করছে এই উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে শিক্ষাবিদরা এই উদ্যেোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও এর দর্শন সম্পর্কে ধারণা না থাকার ফলে এবং অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) মতো বড় এলাকা নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তার আগ পর্যন্ত গাজীপুরে টেলিকমিউনিকেশন স্টাফ ট্রেইনিং সেন্টার, (বিপিএটিসি), ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) ও ময়মনসিংহের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ হবে ৪ মাসের। তবে প্রয়োজনে এটি বাড়ানোও হতে পারে।'

ইউজিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মোটাদাগে ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এগুলো হলো—বাংলাদেশ স্টাডিজ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট।

এই প্রশিক্ষণ কারা দেবেন জানতে চাইলে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, 'এই জায়গায় আমাদের একটু সমস্যা হতে পারে। ভালো মানের প্রশিক্ষক পাওয়াটা কঠিন হবে। তবে বিভিন্ন বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তারাই এই প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষক আনা হতে পারে।'

এই প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের কীভাবে উপকারে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই ভালোভাবে গবেষণা করতে জানেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন, কোনো নতুন জিনিস কীভাবে শিখতে হয়, সেই শেখার পদ্ধতিটিও জানেন না। বিদেশ থেকে কীভাবে ফান্ড আনতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বাড়ানোর জন্য কী করতে হয় তা জানেন না। অনেক অধ্যাপক আছেন যারা তথ্য-প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানেন না। মূলত পাঠদানসহ শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে যা প্রয়োজন সবই তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় থাকবে।'

তবে এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনের অভিমত হলো, 'ইউজিসি মূল সমস্যার সমাধান না করে অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মাস্টার্স পাস করার সঙ্গে সঙ্গে একজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে তো এসব ট্রেনিংয়ের আয়োজন করতে হবে। ইউজিসির উচিত নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডি বাধ্যতামূলক করা। একজন পিএইচডিধারী নিয়োগ পেলে তিনি সবকিছু জেনেই আসবেন। পিএইচডি, পোস্ট-ডক এগুলোই শিক্ষকদের মূল প্রশিক্ষণ। এভাবে নতুন করে প্রকল্প নিয়ে টাকা অপচয় করার কোনো মানে হয় না।'

আর বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের বক্তব্য, 'যারা এসব করছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর দর্শন সম্পর্কে ধারনা আছে কি না—সেটি আগে জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উপায় আছে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা দিচ্ছি তা যথাযথ কি? যাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি তাদের অনেকেই ন্যূনতম যোগ্যতা রাখেন না। এ কারণে প্রশিক্ষণ একাডেমির মতো উদ্যোগ নিতে হয়।'

এই অধ্যাপক মনে করেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য মূল প্রয়োজন গবেষণার অভিজ্ঞতা। আর পিএইচডি করার মধ্য দিয়ে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হয়। এখানে যারা শিক্ষক হন, তাদের শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা থাকে না। আমাদের মূল মনোযোগ দিতে হবে শিক্ষণ পদ্ধতির দিকে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডির খুব প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'একাডেমিতে কারা প্রশিক্ষণ দেবেন সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এসব খুবই আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন সম্পর্কে ধারণার অভাব থাকলেই কেবল এ ধরনের প্রশিক্ষণ একাডেমি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

1h ago