জাবিতে অস্থায়ী মন্দির চত্বরে স্পোর্টস কমপ্লেক্স

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র অস্থায়ী উপাসনালয়টি। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। মাস্টারপ্ল্যান না করেই এই প্রকল্পে চলছে ভবন ভাঙা-গড়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র অস্থায়ী উপাসনালয়টি। স্থায়ী মন্দিরের স্থান নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। এসব জটিলতা নিরসন না করেই অস্থায়ী মন্দির চত্বরের বড় একটি জায়গা ও এর পাশের খালি জায়গাজুড়ে উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।

স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির লক্ষ্যে কাটা হয়েছে পূজার উপকরণ সংগ্রহের বেল গাছ, বিঘ্নিত হচ্ছে প্রার্থনার পরিবেশ—এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।

মন্দির কমিটি ও অংশীজনদের না জানিয়েই মন্দির চত্বরে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে, বলেছেন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কার্যাদেশ হওয়ার পর কাজ করতে এলে আমরা প্রথম বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। তখন প্রশাসনের কাছে আমরা যাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে।'

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও মন্দিরের স্থান নির্বাচন বর্তমান কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ কিছুদিন আগে স্থগিত করা হয়েছে।'

নথি অনুযায়ী, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের এই স্থানেই ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন৷

পরে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের এক বিশেষ সভায় মন্দিরের জন্য ২৬ শতাংশ জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৫ সালে আবার সনাতন, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় নির্মাণের লক্ষ্যে এই ৩ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে স্থান বরাদ্দের ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে ন্যস্ত করা হয়।

ওই বিষয়ে গঠিত কমিটি ২০১৬ সালে ২১ অক্টোবর ৩টি স্থান প্রস্তাব করে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ২৬ শতাংশ জায়গা বরাদ্দের সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়। এই ৩টি থেকে স্থান নির্ধারণের দায়িত্ব উপাচার্যকে দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও উপাসনালয়ের স্থান নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, তৎকালীন সিন্ডিকেট প্রস্তাবিত ৩টি স্থানের মধ্যে ২টি (জয় বাংলা গেটের পুরাতন বাজার ও পানধোয়া যাওয়ার রাস্তা সংলগ্ন) স্থান আবাসিক হল থেকে দূরে হওয়ায় ওই জায়গাগুলো নিয়ে আপত্তি আছে শিক্ষার্থীদের। তবে তৃতীয় (আল বেরুনি হল সংলগ্ন) জায়গাটি নিয়ে তাদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে, এখন আর এখানে মন্দির তৈরি করা যাবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাশেদা আখতার বলেন, 'যেহেতু আল বেরুনি হলের পাশে চারুকলা ইনস্টিটিউট তৈরি করা হয়েছে তাই এখানে মন্দির তৈরি করা সম্ভব না।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আপত্তি জানানোর পরও প্রশাসন থেকে সিন্ডিকেট প্রস্তাবিত তৃতীয় (আল বেরুনি হল সংলগ্ন) জায়গাটি বাদ রেখে আরেকটি নতুন জায়গা প্রস্তাব করা হয়। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া হলের মাঝের ফাঁকা জায়গায় মন্দির নির্মাণ করে দেওয়া হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নেবে বলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন।'

'সম্প্রতি সিন্ডিকেটে সেই জমির অনুমোদন না দিয়ে মন্দির নির্মাণে জায়গা নির্ধারণের জন্য নতুন একটি কমিটি করে দেওয়া হয়,' যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থান নির্বাচন বিষয়ক নতুন গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, 'গত ২৬ জুলাই অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে সভাপতি করে এ বিষয়ক একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এক মাসের ভেতরে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেবো।'

রাশেদা আখতার আরও বলেন, 'আমরা নির্দিষ্ট সময়ে আগেই আমরা জায়গা নির্ধারণের কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করি।'

Comments

The Daily Star  | English

‘For 15 years I fought for BNP leaders and activists, today they pushed me’

Rumeen Farhana says she was almost knocked down during clash at EC over Brahmanbaria boundaries

2h ago