আমরা সব উপজেলা ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়ব: মির্জা ফখরুল

আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যায়ে অব্যাহতভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, 'রোববার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। এরপর আগামী ২২ তারিখ থেকে সব উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ব। একইভাবে প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব।'
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সমাবেশে ইরান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ড্রোন আমদানি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে এই সমাবেশে হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, লড়াই শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এই লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই।'
'এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, রাজপথ আমাদের দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট দানবীয় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সমাজ তৈরি করব,' বলেন তিনি।
দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষকে মনিটর করার জন্য সরকার বিদেশে থেকে ড্রোন নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, 'কয়েকদিন আগে একটা খবর আমার চোখে পড়েছে যে, সরকার বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারা ইরান থেকে ২১টা ড্রোন আমদানি করেছে এবং তারা বলেছে যে, এই ড্রোন ভাসানচরে পরীক্ষা করে দেখবে। স্বরাষ্ট্র নিজে গিয়েছিলেন, দেখেছেন যে ড্রোন কীভাবে চলে?'
'এই ড্রোন কী করবেন? ভাসান চরের রোহিঙ্গাদেরকে তারা (সরকার) মনিটর করবে। আসলে তারা এগুলো নিয়ে এসেছে এদেশের মানুষদের মনিটর করার জন্য, এই ড্রোন নিয়ে এসেছে যারা গণতন্ত্র চায় তাদেরকে মনিটর করার জন্যে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'ড্রোনের নাম শুনলে আমরা খু্ব ভয় পাই। কেনো ভয় পাই? যে আমরা দেখছি ড্রোন দিয়ে কিভাবে অন্যদেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, এই ড্রোন দিয়ে কিভাবে যারা গণতন্ত্র চায়, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে, সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।'
সমাবেশে আসার পথে পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা প্রদান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ উত্তরা থেকে নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেন এবং তাদের মুক্তির দাবি জানান।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকাল ৬টার পর। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকারাইল পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাত ছিল বিএনপির নেতা-কর্মীদের দিয়ে পূর্ণ। এ কারণে আজ পল্টন ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়া পল্টনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'গত ৭ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে এর ২৪০ বিলিয়ন ডলারের হিসাব আছে। বাকি ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথায় গেল?'
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আর কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন আপনারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।'
'সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে, সরকার গঠন করতে হবে,' যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
দেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে চাল, ডাল, তেলসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে বিদ্যুতের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য দেশে যে গ্যাস আছে তা উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়নি। তারা নিজেদের লোক দিয়ে গ্যাস আমদানি করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।'
'বিদ্যুতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট যাদের রয়েছে তাদের ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। গত ৭ বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন আমাদের এই ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথায় গেল? কারা নিয়ে গেল? তা জনগণ জানতে চায়।'
ছাত্রদল-যুবদলসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে 'জেগে' উঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আজ তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের তরুণ সমাজ, যুব সমাজকে জেগে উঠতে হবে। তাদের আজ নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।'
'সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের নিরাপত্তার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের সমৃদ্ধির স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে ন্যায়বিচার, সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার স্বাধীনতা। নতুন বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করব তারেক রহমানের নেতৃত্বে,' বলেন মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাধা প্রদানের অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
Comments