যেভাবে চলছে নারায়ণগঞ্জে মদ উদ্ধার ঘটনার তদন্ত

মদ
চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করা মদ। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ থেকে মিথ্যা ঘোষণায় আনা দুই কন্টেইনার মদের চালান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জব্দের ঘটনায় 'প্রাণনাশের হুমকি'র অভিযোগে থানায় জিডি করা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা রাশেদুর রহমানের দেওয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের দাবি, যে তথ্য তিনি দিয়েছেন তাতে অমিল আছে।

কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) রাশেদুর রহমানের দাবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা পুরো ঘটনাটিকে 'ভিন্নখাতে' প্রবাহিত করতে এবং সুপরিকল্পিতভাবে তাকে দোষী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এ বিষয়ে রাশেদুর রহমান কাস্টমস গোয়েন্দা এবং শুল্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

গত ২৪ জুলাই 'প্রাণনাশের হুমকি'র অভিযোগে রাশেদুর রহমান বন্দর নগরীর ইপিজেড থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রি করেন। পুলিশ জিডির তদন্ত করছে। রাশেদুর রহমান চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিপিইজেড) কাস্টমস শাখায় কর্মরত আছেন।

ভুয়া আইপি (ইমপোর্ট পারমিশন) ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪০ ফুটের দুটি কন্টেইনারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ খালাসের পর সোনারগাঁ যাওয়ার পথে র‍্যাব-১১ চালানটি জব্দ করে।

এর পরদিন এআরও রাশেদুর রহমানকে একটি বিদেশি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন। ২৪ জুলাই তিনি এ ঘটনায় থানায় নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন রাশেদ। জিডি করার পর ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রানা প্রতাপ বণিক জিডির তদন্তভার পান এবং আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্তে নামেন। এআরও রাশেদের  থেকে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনশটের প্রিন্ট কপি জমা দিতে বলেন এবং সেই অনুযায়ী তিনি তা জমা দেন এবং তার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রানাকে নিয়ে রাশেদুর রহমানের পাঠানো চিঠি প্রাপ্তি নিশ্চিত করে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন কিন্তু আমি তাকে মৌখিকভাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের মাধ্যমে এটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাতে বলেছি কারণ তার সুপারভাইজিং অথরিটি হলেন কাস্টমস কমিশনার। এ বিষয়ে শুল্ক অধিদপ্তরের কিছু করার নেই।'

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে রাশেদ অভিযোগ করেন, ২৫ জুলাই এসআই রানা প্রতাপ বণিকের কাছে মোবাইল ফোন দেয়ার পরে অভিযুক্ত নম্বর থেকে তার ফোনে আসা প্রথম কলটি আর দেখা যাচ্ছে না এবং উক্ত নম্বরটি হারিয়ে যাওয়ার ফলে কল লিস্টের ফটোকপি কোর্টে পাঠাতে হবে জানিয়ে এসআই রানা তাকে তার মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপের স্ক্রিনশট পাঠাতে বলেন।

তিনি চিঠিতে লিখেছেন, পুরো বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এমনটি করা হয়েছে এবং স্বাক্ষ্যপ্রমাণ মুছে ফেলে তাকে উল্টো দোষী সাব্যস্ত করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। তিনি সার্বিক বিষয় ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানান শুল্ক গোয়েন্দার কাছে।

পুলিশের কাছে জমা দেয়া  রাশেদের হোয়াটস অ্যাপের কল লগ অনুসারে ২৩ জুলাই সকাল ১০.৪৮ মিনিটে রাশেদের মোবাইল ফোন থেকেই ওই নম্বরে 'আউটগোইয়িং ভয়েস কল' যায় এবং ৪৬ সেকেন্ড কথা হয়। এরপর আবার সকাল ১০.৫১ মিনিটে রাশেদের নাম্বারে সেই নম্বর থেকে আবার 'ইনকামিং ভয়েস কল' আসে এবং যা ৫০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এরকিছু সময় পর আবার ১০.৫৪ মিনিটে আরেকটি মিসকল আসে রাশেদের হোয়াটস অ্যাপে।

শুরুতে রাশেদ পুলিশকে জানিয়েছিলেন যারা তাকে হুমকি দিয়েছেন তাদের কাউকে তিনি চেনেন না তবে পুলিশের কাছে জমা দেয়া কাগজের দেখা যাচ্ছে হুমকি প্রদানকারী নম্বরটি রাশেদের ফোনে 'জিকে ট্রেডিং' নাম দিয়ে সেভ করা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের সূত্র।

এ সব বিষয়ে জানতে রাশেদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যা ঘটছে তাই লিখিতভাবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের অনুমতি ছাড়া আমি মিডিয়ার সাথে কথা বলা ঠিক নয়। আর জিকে ট্রেডিং এর কাউকেই আমি চিনি না।'

তদন্তকারী কর্মকর্তা কীভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে তার কোনো বিরোধ আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি শুধু পত্র দিয়ে ঘটনাটি অবগত করেছি অন্য কিছু নয়।'

এ বিষয়ে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, 'তিনি কি অভিযোগ দিয়েছেন এই বিষয়টি আমরা অবগত নই। আমরা তাকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ করে আমরা বলতে পারবো আদৌ এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা।'

জিডি করার দিন ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ মদ বহনকারী আরও একটি কনটেইনার পাওয়া যায়। পরের দিন ২৫ জুলাই বন্দরে আরও দুটি কন্টেইনারে মদ ভর্তি অবস্থায় পাওয়া যায়। মোট পাঁচটি মদের কন্টেইনার পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছেন, পাঁচটি কন্টেইনারের সব মদই মিথ্যা ঘোষণায় বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে।

কাস্টম নথি অনুযায়ী, জব্দকৃত চালানগুলো নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি এবং মংলা ইপিজেডে অবস্থিত ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, হ্যাশি টাইগার কোং লিমিটেড নামে চীন থেকে পলিয়েস্টার সুতা হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল। হ্যাশি টাইগার কুমিল্লা ইপিজেডে এবং বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেড, ঈশ্বরদী ইপিজেডে অবস্থিত।

Comments

The Daily Star  | English

What if India and China stop buying Russian oil?

Donald Trump is tightening sanctions loopholes that fund Moscow's war machine. What does a crackdown on Russia's oil trade mean for global markets — and economic heavyweights like China and India?

6h ago