বরগুনায় ছাত্রলীগকে লাঠিপেটা: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী প্রত্যাহার

পুলিশের শাস্তি দাবি এমপির, ছাত্রলীগের একাংশের ধন্যবাদ
মহরম আলী
মহরম আলী। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীদের পুলিশের লাঠিপেটা এবং বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে তর্কাতর্কির ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহরম আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, 'সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।'

ওই ঘটনায় পুলিশের পেশাদারত্ব কতটা ছিল, ঘটনাস্থলে কী কী হয়েছে তার সব কিছুই তদন্ত করা হবে, জানান তিনি।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পদবঞ্চিত কয়েকজন হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যেই পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধর করে।

এ সময় বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম এটম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে বের হন এমপি শম্ভু। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর কাছে লাঠিপেটার কারণ জানতে চান তিনি। তখন মহরম আলী এমপির সঙ্গে তর্কে জড়ান। বলেন, 'স্যার আমাদের গাড়ি ভেঙেছে ছাত্রলীগ। আমাদের গাড়ি ভাঙল কেন জবাব দিয়ে যেতে হবে।'

ওই সময় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সবুজ মোল্লার বড় ভাই জসীম মোল্লা পুলিশের লাঠিপেটা নিয়ে এমপি শম্ভুর কাছে অভিযোগ করতে থাকলে এমপির সামনেই জসীম মোল্লাকে এএসপি মহরম ধমক দিয়ে বলেন, 'গাড়ি ভাঙচুরের অ্যাকশন হবে কিন্তু।'

​​​​​​​

জবাবে জসীম বলেন, 'মামলা দেন, মারলেন কেন?' এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এমপির সামনেই ডিবি পুলিশ জসীম মোল্লাকে পিটুনির পর আটক করে নিয়ে যেতে চাইলে এমপির নির্দেশে পুলিশ জসীম মোল্লাকে ছেড়ে দেয়।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলীকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পুলিশের তদন্ত কমিটি

বরগুনায়  জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষকালে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক আজ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করেন। আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা সার্কেল) তোফায়েল আহমেদ সরকার ও জেলা পুলিশ কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন খান।

সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বক্তব্য

এ ঘটনায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, 'আমি পুলিশকে বলেছি, যে আপনাদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারধর করবে। আমি তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে, যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।'

গতকাল সোমবার রাত ৯ টার দিকে বরগুনার প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন পুলিশের বিষয়টি আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরমের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।

সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের পরামর্শ ছাড়াই জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের আগে কাউন্সিল বাধ্যতামূলক, এ কমিটি দেওয়ার আগে সেটাও করা হয়নি। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার অপেক্ষা করছি।'

জেলা ছাত্রলীগের একাংশের পুলিশকে ধন্যবাদ

শোক দিবসের আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের শোক র‌্যালিতে দুষ্কৃতকারীদের হামলার প্রতিবাদে বরগুনা প্রেসক্লাবে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল কবির রেজা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমরা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শোক র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করি। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অতিক্রম করলে একাডেমির ভেতর থেকে আমাদের উদ্দেশ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। কে বা কারা মেরেছে তা আমরা দেখিনি। এই ইট পাটকেল ছুড়তে গিয়ে পুলিশের গাড়ির গ্লাস ভাঙলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেজন্য আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

সংসদ সদস্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছে, অন্যদিকে আপনারা পুলিশকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, এমন সাংঘর্ষিক বক্তব্যের উত্তর জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যারা অবস্থান করছিল, তারা কারা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিকুর রহমান ইমরান বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি আমাদের ছাত্রলীগের নয়।

গতকালের সংঘর্ষের ঘটনা কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং  শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলানায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।

এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English

What if India and China stop buying Russian oil?

Donald Trump is tightening sanctions loopholes that fund Moscow's war machine. What does a crackdown on Russia's oil trade mean for global markets — and economic heavyweights like China and India?

4h ago