‘প্লাস্টিক বোতল দিন, গাছের চারা নিন’

প্লাস্টিক বোতল জমা করে চারা গ্রহণ করছে এক শিক্ষার্থী। ছবি: স্টার

'খালি প্লাস্টিক বোতল জমা দিন, গাছের চারা  দিন' শ্লোগানকে সামনে রেখে পরিবেশ বাঁচাতে ও পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এক কর্মসূচী শুরু করেছে সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এই স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশবাদী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে।

সংস্থার সদস্যরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং এই বিপর্যয় রোধে বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা তুলে ধরেন।

তারা সভাস্থলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্লাস্টিক বোতল জমা নিয়ে উপযুক্তস্থানে রোপণের জন্য গাছের চারা দিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং খালি প্লাস্টিক বোতল জমা দিয়ে গাছের চারা নিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।

সংগঠনটি গত ৭ বছর ধরে পাখির প্রজনন মৌসুমে মাটির কলসে খড়কুটো দিয়ে কৃত্রিম বাসা তৈরি করে গাছের ডালে বা দালানের ছাদে বেঁধে রাখছে। ফলে ব্যাপক বৃক্ষ নিধনে বাসস্থান হারানো পাখিরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে নিরাপদে ডিম দিচ্ছে এবং বাচ্চা ফোটাচ্ছে।

পরিবেশ সুরক্ষায় সংগঠনটির অবদানের জন্য যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বছর তাদের 'শেখ হাসিনা যুব স্বেচ্ছাসেবী পুরস্কার' এ ভূষিত করেছে।

এ ছাড়া, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাখি সংরক্ষণে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় ২০১৬ সালে তাদের সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে।

সম্প্রতি সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির নীলফামারী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সফিকুল আলম ডাবলু শাহ্ বলেন, 'এই উদ্যোগটিকে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে, যাতে পরিবেশ সংরক্ষণ হয় এবং আবাসস্থল হারানো পাখিরা নতুন আশ্রয় খুঁজে পায়।'

সেতুবন্ধন সদস্যদের সঙ্গে গাছের চারা গ্রহণকারী সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ছবি: স্টার

সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'ব্যবহারের পর মানুষ খালি প্লাস্টিক বোতল যত্রতত্র ছুঁড়ে ফেলে। সেই বোতলগুলো জমির উর্বরতা নষ্ট করে, মাটির নীচে গাছের শিকড় বিস্তারে বাধা দিয়ে সেগুলোকে নষ্ট করে। শত শত বছরেও সেগুলো পচে না। একইভাবে সেগুলো ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতার কারণ হয়।'

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাবিনা আক্তার ও কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, তারা বাড়ি থেকে পরিত্যক্ত খালি প্লাস্টিক বোতল এনে জমা দিয়েছে ও নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণের জন্য চারা সংগ্রহ করেছে।

আয়োজকরা জানান, এই অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষার্থীরা ৫৬০টি প্লাস্টিক বোতল জমা দিয়ে চারা গ্রহণ করেছে।

সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, 'সমাবেশগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে, পরিবেশ রক্ষায় তারা যদি সেগুলো প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োগ করে তাহলেই আমাদের সার্থকতা।'

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হুসাইন বলেন, 'পরিবেশ ও পাখি রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য সেতুবন্ধন সংগঠনটি একাধিক সরকারি পুরস্কার অর্জন করেছে। প্রশাসন বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Atrocities during July uprising: Of pellets and lost eyesight

On the afternoon of July 18 last year, Zakia Sultana Neela, an assistant professor at the National Institute of Ophthalmology and Hospital (NIOH), stepped out of a routine surgery into a scene of unfolding horror.

5h ago