উচ্চ মূল্যে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেনায় বছরে ক্ষতি ১ বিলিয়ন ডলার

ফাইল ছবি

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসেবে)।

একটি গবেষণা বলছে, প্রায় একই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার পরও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনেছে।

২০০৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৫৮টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা বিদ্যুতের মূল্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় বলা হয়, কিছু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক চুক্তি না করায় বিদ্যুৎ খাতে বিপুল খরচ বেড়েছে।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি করেছেন অ্যান্টি করাপশন এভিডেন্স রিসার্চ পার্টনারশিপ কনসোর্টিয়ামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন খান। তিনি একই সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ব্যবসায়ীদের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

মুশতাক হোসেন খান বলেন, খরচের দিক দেখলে এটা বিশাল পার্থক্য তৈরি করছে। যা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।'

গবেষণায় বলা হয়, জনগণের নাগালে রাখতে বিপিডিবি তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর লোকসান সামাল দেওয়া হয় জনগণের টাকায় ভর্তুকির মাধ্যমে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে শুধুমাত্র সরকারি জমি ইজারা দেওয়ার কারণে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। ইজারার বিষয়টিকে অর্থনৈতিক মডেলিংয়ে বিবেচনায় নিয়ে এ হিসাব করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, রাজনৈতিক যোগসাজশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির পথ সুগম হয়েছে। যেমন, কম খরচের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। অথচ বিষয়টা উল্টো হওয়ার কথা ছিল।

'ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও বিদ্যুতের চাহিদা যখন সর্বনিম্ন থাকে (বেস লোড) তখনো এদের থেকেই বিদ্যুৎ কেনা হয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অন্যদের তুলনায় আগে গ্যাস পায়। দুই পক্ষের মধ্যে যোগসাজশে এটা হয়।'

গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ডার দেওয়া না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ দাম দিতে হয়।

ক্যাপাসিটি চার্জের সুবিধা থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেই বরং তাদের মুনাফা বেশি হয়।

মুশতাক বলেন, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিবেচনা না করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করাই এর একমাত্র সমাধান।

তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিচয় নেই এরকম বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এতে উৎপাদন পর্যায়ে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমতে পারে।

গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা নিলে এবং জমি ইজারার ব্যাপারটি পরিবর্তন করলে বিদ্যুতের দাম ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন দুর্নীতি দমন কৌশল বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বা ট্যাক্সের মতো গোপনীয় তথ্য পাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

4h ago