পেট্রোবাংলার জন্যও দায়মুক্তির আইন

পেট্রোবাংলার জন্য নতুন যে আইন হতে যাচ্ছে, সেখানে কর্মকর্তাদের ‘সরল বিশ্বাসে করা’ সব কাজের দায়মুক্তির বিষয়টি যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার জন্য নতুন যে আইন হতে যাচ্ছে, সেখানে কর্মকর্তাদের 'সরল বিশ্বাসে করা' সব কাজের দায়মুক্তির বিষয়টি যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সামরিক শাসনের যেসব আইন বাতিল হয়েছিল, তার মধ্যে ১৯৮৫ সালের পেট্রোবাংলার আইনটিও ছিল। নতুনভাবে আইনটি করার জন্য সংসদে আনা বিলে দায়মুক্তির বিধানটি বাতিল হলেও তা সংযুক্ত করার সুপারিশ এসেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এই সুপারিশ করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

গত জুনে সংসদে বিলটি উত্থাপন করার পর এটি পর্যালোচনার জন্য এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আছে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন অধ্যাদেশ- ১৯৮৫ এর ২১ ধারায় ছিল, সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের ক্ষেত্রে বোর্ড, চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো পরিচালক বা করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা, প্রসিকিউশন বা অন্যান্য আইনি কার্যক্রম চলবে না।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক ফরমানে জারিকৃত অধ্যাদেশগুলো বাতিল হলে নতুন এই আইন করার প্রয়োজন পড়ে।

বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হলে তারা যে আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তাদের একজন। ইনডেমনিটি ধারাটি নতুন আইনে রাখা উচিত উল্লেখ করে তিনি তার মতামতে লিখেছেন, করপোরেশনের কোনো কর্মচারী যদি করপোরেশনের স্বার্থে সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করে সেক্ষেত্রে যদি তাকে 'ইমিউনিটি বা ইনডেমনিটি' দেওয়া হয়, তবে তিনি নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

তার এই সুপারিশটি গত ৪ আগস্ট স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, যেটি গতকাল সোমবারের বৈঠকের আলোচ্য সূচিতেও ছিল। যদিও এই সুপারিশটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানতে চাইলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এ ধরনের কোনো সুপারিশ পাননি, এটি নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

বিষয়টি কার্যপত্রে উল্লেখ ছিল জানালে তিনি বলেন, 'কার্যপত্রে অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু সেগুলো সিদ্ধান্ত নয়। কমিটি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।'

স্থায়ী কমিটির সুপারিশ খুব শিগগির জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত ৫ জুন সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই বিলটি উত্থাপন করেন।

'দায়মুক্তির' ধারাটি সংযোজন করার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের বিধান রেখে আইন তৈরি করা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এর আগেও বহু উদাহরণ আছে যে এসব ধারার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বহু দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন, জনগণের সম্পদের সুরক্ষা না করে বরং আইন লঙ্ঘন করতে উদ্বুদ্ধ হন, আর্থিক তছরুপ করেন।'

'এ ধরনের কর্মকাণ্ড জাতির সঙ্গে প্রতারণা। সরকারের জন্য কোনোভাবেই এ ধরনের বিধান রেখে কোনো আইন তৈরি করে দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা উচিত নয়', তিনি যোগ করেন।

এর আগে গত বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০- এর চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ওই আইনটির ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে কারণ ওই আইনের ৯ ধারার অধীনে 'কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।'

২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে দুই বছরের জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ২০১২ সালে ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছর, ২০১৮ সালে ৩ বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫ বছরের জন্য আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

১০ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি, সাধারণ বা বিশেষ আদেশের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্যেও জন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন প্রকার আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে না।

Comments