শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা: এজাহারের তথ্য জানে না চবি প্রশাসন

শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগ এনে ৮ ঘণ্টা আটক রেখে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সমালোচনার মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে 'নাশকতার পরিকল্পনা'র অভিযোগ এনে ৮ ঘণ্টা আটক রেখে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সমালোচনার মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন।

গতকাল বুধবার রাতে তাকে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে, মামলার বিবরণে নাশকতার পরিকল্পনা, খেলাফত প্রতিষ্ঠাসহ আরও কিছু অভিযোগ আনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গে মামলার এজাহারের যথেষ্ট গরমিল পাওয়া গেছে।

ক্যাম্পাস সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেপ্তার মো. জোবায়ের হোসেনসহ (২৩) আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে চবির এক ছাত্রের ওপর স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের হামলার প্রতিবাদে ও ক্যাম্পাসে চক্রাকার বাস চালুর দাবিতে মানববন্ধন করছিল বুধবার দুপুরে। পরে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের আলোচনার জন্য তাদের চবি প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হলেও জোবায়েরকে প্রায় ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

জোবায়ের চবি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্র অধিকার পরিষদ চবি শাখার সদস্য বলে ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান শেখ আব্দুর রাজ্জাক সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হাটহাজারী মডেল থানায় দায়ের করেন। তবে এজাহারে থাকা তথ্যের সঙ্গে চবির প্রক্টর ড. রবিউল ইসলাম ভূঁইয়ার বক্তব্য সাংঘর্ষিক হওয়ায় পুরো ঘটনাটি নিয়েই আলোচনা ও সমালোচনা চলছে ক্যাম্পাসজুড়ে।

চবি প্রক্টর রবিউল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত জোবায়ের একজন শিবিরকর্মী এবং আমরা তার ডায়েরি থেকে শাটল ট্রেনে নাশকতা ও ট্রেন চালককে অপহরণের জন্য হাতে লেখা পরিকল্পনা, তার মোবাইল থেকে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানহানিরকর বেশ কিছু ছবিসহ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছি।'

তবে মামলায় চবি প্রশাসন দাবি করেছে, জোবায়ের 'দ্বীন ইসলাম' গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য ক্যাম্পাসে অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, 'নোট বইটির বিভিন্ন পাতায় দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে লেখা আছে। জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে, তারা ইসলামী খিলাফত কায়েম করার জন্য নিজেদের মধ্যে গোপনে যোগাযোগ করতে ফেসবুক গ্রুপ যার নাম চবি শিক্ষার্থী সংসদ, সিউই ওয়ারিয়োর্স, এক্সক্লুসিভ সেক্টর, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ যার নাম শাটল, পরিশুদ্ধতার পথে শাশ্বত সাতাশ এর সংসদ, ল অ্যান্ড এডুকেশনসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন। উক্ত আলোচনায় অভিযুক্ত ছাত্র দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতো। অভিযুক্ত ছাত্রসহ অজ্ঞাতনামা কিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন ধরণের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও চাঁদা সংগ্রহের প্রচেষ্টায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আটককৃত অভিযুক্ত ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, চট্টগ্রাম শহরে রাষ্ট্র বিরোধী আন্দোলন করে আতঙ্ক সৃষ্টি পূর্বক তাদের তথাকথিত নিজস্ব দ্বীন কায়েম করার জন্য পরিকল্পনা করছে।'

তবে জাতির পিতার অবমাননাকর ছবি এবং শিবিরের রাজনীতির কথা বলা হলেও মামলার বিবরণীতে তা কোথাও উল্লেখ নেই। আবার তাদের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রক্টর অফিসে ডেকে আনা হলেও মামলায় বলা হয়েছে তারা পালানোর সময় প্রশাসন জোবায়েরকে আটক করে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল জানান, ওই সময় ভর্তি পরীক্ষা চলছিল বলে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর রাতেই ওই ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

মামলার এজাহার সম্পর্কে জানতে চাইলে চবি প্রক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, 'আমি মামলার বিবরণী দেখিনি। তবে জমা দেওয়ার আগে আমাকে তা পড়ে শোনানো হয়েছে। পুলিশ মামলার বিবরণী তৈরি করেছে। তবে তার সন্দেহজনক আচরণ দেখে আমরা নিশ্চিত যে, সেই শিক্ষার্থী রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।'

আরও কিছু প্রশ্ন করা হলে প্রক্টর রবিউল মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি মামলার বক্তব্য দেখিনি তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। পুলিশ এজাহার লিখেছে, শুধু আমি সাক্ষর করেছি। আমি অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন করেছি শুধু। এখন পুলিশ মামলাটি তদন্ত করবে।'

পরে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আর কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রতিবেদক হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাসরিন আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি যদি শিবির কর্মী হয়ে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধিকার নেই তাকে কোনো ধরনের ফৌজদারি অভিযোগ ছাড়া পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার।'

'রাজনীতি করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। তার পরিবার এবং বন্ধুদের না জানিয়ে তাকে ৮ ঘণ্টা হেফাজতে রাখা এবং পরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করে চবি প্রশাসন সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Lightning strikes claim 7 lives in 4 districts

At least seven people died and nine others were injured in lightning strikes in Rangamati, Sylhet, Khagrachhari, and Cox’s Bazar districts today

25m ago