মন খারাপ একটি অনুভূতি, বিলাসিতা নয়

ছবি: সংগৃহীত

একটু বুদ্ধি বিবেচনা হওয়ার পর কম বেশি সবারই মানসিক জটিলতা তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে কেউ কেউ সেসব নিজেরাই সামলে নেন। কেউ আবার সামলাতে পারেন না।

সময়ের সঙ্গে জীবনের পরিধি বাড়ে, জটিলতা বাড়ে, কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ যেন হয়েছে আরও আত্মকেন্দ্রিক।

তাই কারো মন খারাপ, চিন্তা, অবসাদ ইত্যাদিকে সমাজের এক স্তর বিলাসিতা হিসেবে দেখেন এবং মনে করেন, করুণা কিংবা আগ্রহ পাওয়ার জন্য এসব করা হয়।

তাই অনেকেই যথাসময়ে সমস্যার গুরুত্ব বোঝেন না। বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেন না। এরপর এই মনস্তাত্ত্বিক অসুবিধা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন নড়েচড়ে বসেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

নিজের এবং অন্যের মন ভাল রাখতে, এই অন্ধবিশ্বাস থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। হোক নিজের মন খারাপ কিংবা চারপাশে কারো। যদি অবসাদে ভুগতে দেখেন, তাহলে বিষয়টায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

একটানা বেশ কিছুদিন একই রকম দুশ্চিন্তা বা মনঃকষ্ট অনুভূত হলে বা মাথায় ঘুরলে কিংবা  আকস্মিক কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলে সমস্যার শুরুতেই যদি তা বুঝতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হওয়া সহজেই আটকানো সম্ভব। বেশিরভাগ মানসিক জটিলতাই তার অস্তিত্ব জানান দেয় কিছু সূক্ষ্ম আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই পরিবর্তনগুলো আপাতদৃষ্টিতে এতটাই সাধারণ যে তার গুরুত্ব বোঝা কঠিন। হঠাৎ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, হঠাৎ কেঁদে ফেলা বা চুপচাপ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ আবেগের অতিরিক্ত বহিঃপ্রকাশ বা আবেগহীনতা, দু'টোই মানসিক অসুস্থতার ইঙ্গিতবাহী। এই ধরনের সমস্যা সহজ কিছু কগনিটিভ থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়েই ঠিক হয়ে যায়। তবে তার জন্য সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন।

অনেকেই পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এই ধরনের সমস্যার কথা আলোচনা করেন। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই 'সব ঠিক হয়ে যাবে' এরকমের কথা শুনতে হয়। এছাড়াও ভুল ব্যাখ্যা বের হওয়ার আশঙ্কা থাকে বা পরিচিত হলে স্বাভাবিকভাবেই জাজমেন্টের প্রশ্ন আসে। নিরপেক্ষ অভিব্যক্তি পেতে হলে অপরিচিত কারো সাহায্য নেওয়া তুলনামূলক ভাল।

একটা কথা সবার বেশ পরিচিত, 'আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে ততটুকুই দেখি বা জানি, আরেকজন যতটুকু জানাতে চায়!' সপ্তাহে ৭ দিন ৭টি রেস্টুরেন্ট ইন্টেরিয়রের ছবি দেখে যদি আপনার মনে হয় কেউ বেশ ধনী কিংবা স্মোকি চোখ সাজানো দেখে যদি মনে করেন সে কাঁদতে কিংবা রাত জাগতে জানে না সেটাও ভুল। এসব তুলনা কিংবা অহেতুক চিন্তা তৈরি করে ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স। এই সমস্যায় ভুগে নিজেরাই নিজেদের জীবনে জটিলতা তৈরি করেন অনেকেই। জটিলতা ভয়ানক আকার ধারণ করলে, তাদের আচরণগত পরিবর্তন ধরা পড়ে। এই পরিবর্তন যারা খেয়াল করতে পারেন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলা যেতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যা নিতান্তই কম।

কিন্তু মানবিক বিবেচনায় এই মন খারাপ কে অবজ্ঞা করার মানসিকতা বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।

করণীয়ঃ

জীবনকে মনে করতে হবে একটি মিষ্ট্রি বক্স। বার্থডে বা বিশেষ দিবসের জন্য আমরা যেই সারপ্রাইজ পাই সেটার র‌্যাপিং খুলতে আমাদের খুব ভালো লাগে। আগ্রহ থাকে ভেতরে কী আছে জানার। জীবনও ঠিক তাই। বলা হয়, স্রষ্টা প্রতিটি সকালে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পুনর্জন্ম দেন। তাই প্রতিটা দিনই জীবনে নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসে। সবদিন এই গল্প সবার জন্য সুন্দর না হলেও, কোনো কোনো দিন সুন্দর। সেটার জন্যও ধৈর্য ধরতে হবে। এছাড়া বাড়াতে হবে সেরোটোনিন ক্ষরণ। সেরোটোনিন কে বলা হয় সুখের হরমোন বা হ্যাপি কেমিক্যাল। এছাড়াও, মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়াতে যে কয়েকটি নিউরোট্রান্সমিটার খুব গুরুত্বপূর্ণ এরমধ্যে সেরোটোনিন একটি।

সেরোটোনিন উৎপাদনে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তারমধ্যে অন্যতম রাগ, কাউকে দোষারোপ করা, অহমিকা থাকা, যেকোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা, যেকোনো ধরনের ডিস্ট্রাকশন বা বাঁধা (বারবার নোটিফিকেশন চেক করা, বা কোন কাজের মধ্যে মোবাইলে কথা বলা) ।

তাহলে কী হতে পারে সেরোটোনিন বৃদ্ধির সহায়ক? জেনে নিই সেরোটোনিন বৃদ্ধির কিছু উপায়

১) সকালে ব্যায়াম করার মাধ্যমে অথবা দিনের যেকোনো সময় ব্যায়াম করলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সেরোটোনিন লেভেল বজায় থাকে।

২) সকালে সূর্যের আলো সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে।

৩) হাসিখুশি থাকলে স্ট্রেস হরমোন কম ক্ষরিত হয়, সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ে।

৪) শরীর ম্যাসাজ করালেও সেরোটোনিন বাড়ে।

 ৫) প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন প্রতিদিন একটা ডিম কিংবা মাছ-মাংস, ছোলা ডাল ইত্যাদি সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়।

৬) ধর্মীয় গ্রন্থ তেলাওয়াত করলে বা শুনলে সেরোটোনিন লেভেল বৃদ্ধি পায়।

ব্যস্ত এই জীবনে দাঁড়িয়ে কারো কথা শোনার সময় পাওয়া হয়ত বেশ মুশকিল। কিন্তু কারো মন খারাপ বুঝলে, দুর্বলতা জানলে বা কষ্টের সময়ে একটু সহানুভূতিশীল হওয়া হয়তো অসম্ভব না। খেয়াল করতে হবে, মন খারাপ একটি অনুভূতি, বিলাসিতা নয়।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

5h ago