ঢাকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লির দ্বিগুণ, কলকাতার তিন গুণ, লাহোরের আড়াই গুণ

ভারতীয় ও পকিস্তানি রুপি বাংলাদেশি টাকায় পরিবর্তন করে দেখানো হয়েছে। সূত্র: নয়াদিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই ও লাহোর মেট্রোরেলের ওয়েবসাইট

মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় যারা আছেন, তাদের জন্যে সংবাদটি স্বস্তিদায়ক হলো না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানালেন, মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চূড়ান্ত করেছে সরকার।

এই ভাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লি ও কলকাতার চেয়ে যথাক্রমে প্রায় দ্বিগুণ ও তিন গুণ বেশি এবং পাকিস্তানের লাহোরের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোতে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে খরচ ৪০ রুপি, ছুটির দিনে যা নেমে আসে ৩০ রুপিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৫০ টাকারও কম, ছুটির দিনে প্রায় ৩৫ টাকা।

দিল্লিতে ৩২ কিলোমিটারের বেশি পথ মেট্রোরেলে যাওয়া যায় ৬০ রুপিতে।

দিল্লিতে মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি, কলকাতায় ৫ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ রুপি ১২ টাকার সমান এবং ৫ রুপিতে প্রায় ৬ টাকা। চেন্নাই মেট্রোরেলেও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি। 

অথচ, ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা। 

অর্থাৎ দিল্লি ও চেন্নাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ এবং কলকাতার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি ভাড়া ধরা হয়েছে চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ঢাকার মেট্রোরেলে।

পাকিস্তানের লাহোর মেট্রোরেলেও সর্বনিম্ন ভাড়া সম্প্রতি বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ রুপি। পাকিস্তানি ২০ রুপি প্রায় সাড়ে ৮ টাকার সমান।

কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ও সর্বনিম্ন ভাড়ায় গোঁজামিল

গতকাল মঙ্গলবার সকালে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী জানান, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। কিন্তু মেট্রোরেলে উঠলেই সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন আছে ১৬টি। অনেকগুলো স্টেশনের দূরত্ব ১ কিলোমিটারেরও কম। মিরপুর-১২ থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১১ থেকে মিরপুর-১০, কাজিপাড়া ও শেওড়াপাড়া—এসব স্টেশনে একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কম।

কিন্তু একটি থেকে আরেকটিতে যেতে হলে সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। অথচ, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে ৫ টাকা।

কম দূরত্বে চলাচলে নিরুৎসাহ

মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা দেখলে যে কেউ ধারণা করতে পারেন, মেট্রোরেলে অল্প দূরত্বে চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কোনো যাত্রী যদি মিরপুর-১০ থেকে কাজিপাড়া যেতে চান, তাহলে তাকে ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। অথচ, বাসে এর অর্ধেক ভাড়ায় এই দূরত্ব তিনি অতিক্রম করতে পারবেন।

রাস্তার যানজট কমাতেই মেট্রোরেল করা হয়েছে বলা হলেও, এভাবেই অল্প দূরত্বের যাতায়াত নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

অল্প দূরত্বের যাত্রী বেশি হলে মেট্রোরেল চলাচলে বাড়তি সময় লাগবে—বিষয়টি এমনও নয়। প্রতিটি স্টেশনেই নির্দিষ্ট সময় থামবে মেট্রোরেল।

প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল অফিসে যাতায়াত করলে, মেট্রোরেলে দৈনিক ভাড়া গুণতে হবে ২০০ টাকা। মাসে সম্ভাব্য খরচ অন্তত ৬ হাজার টাকা। 

উত্তরা থেকে একটি পরিবারের ৫ জনের মতিঝিলে যেতে হলে খরচ পড়বে ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

7h ago