‘ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন সম্ভব না’

দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না বলে জানিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) টেকনিক্যাল কমিটি। 

দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না বলে জানিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) টেকনিক্যাল কমিটি। 

রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের নমুনা পরীক্ষা শেষে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় টেকনিক্যাল কমিটি।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেয় ইআরএল কর্তৃপক্ষ। বিপিসির চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) কুদরত-ই-ইলাহী।

২০ পাতার প্রতিবেদনের মতামত অংশে ইআরএল'র টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান কাঠামোতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না।
  
প্রতিবেদন জমার বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
  
তিনি বলেন, 'ইআরএল থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবেদনের মতামত অংশে উল্লেখ করেছেন, ইআরএল'র বর্তমান মেশিনারিজ দিয়ে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না। তারা আরও কিছু মতামত দিয়েছেন, যা খুবই টেকনিক্যাল বিষয়।'

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, 'প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা শেষে আমরা আগামী দু-একদিনের মধ্যে অফিসিয়ালি রাশিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেবো।'

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের নমুনা পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন বিপিসি চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিয়েছি।'
  
বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইআরএল থেকে রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের নমুনা পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ২০ পাতার প্রতিবেদনের শেষ দিকের অংশে মতামত দিয়েছে ইআরএল'র টেকনিক্যাল কমিটি। এই কমিটির প্রধান ছিলেন ইআরএল'র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহমদ। সদস্য সচিব ছিলেন ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) সামিউল ইসলাম।

বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান, ৫০ বছরের পুরনো ইস্টার্ন রিফাইনারিতে মূলত মারবান এবং অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল রিফাইন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের ইয়েল্ড প্যাটার্ন এভাবেই তৈরি। এই প্যাটার্নে অন্য কোনো ক্রুড অয়েল রিফাইন করা সম্ভব না।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার ক্রুড অয়েল অ্যারাবিয়ান ক্রুডের চেয়ে ভারি। তাই ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো পুরনো স্থাপনায় রাশিয়ার ক্রুড পরিশোধন করা সম্ভব না।

তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবেও রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা আমাদের জন্য লাভজনক হবে না। কারণ অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড এবং মারবান ক্রুড পরিশোধন করলে আমরা ৪২ শতাংশ ডিজেল পাই। আর রাশিয়ার ক্রুড (উরাল ক্রুড) পরিশোধন করলে ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ ডিজেল পাব। রাশিয়ার ক্রুডের তলানি বেশি, প্রায় ৫৫ শতাংশ। এই তলানি পরিশোধনের ব্যয় অনেক বেশি হবে। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় রাশিয়ার ক্রুড ইআরএলে পরিশোধন করা ব্যয়বহুল হবে বিধায় নেতিবাচক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারুবেঝনেফ জেএসসি তাদের বাংলাদেশি এজেন্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিক বিডি লিমিটেডের প্রতিনিধির মাধ্যমে গত ১ সেপ্টেম্বর ক্রুড অয়েলের নমুনা পাঠায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। সেসময় ইআরএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান ক্রুড অয়েলের চালানটি গ্রহণ করেন। নমুনা চালানে ৫টি প্লাস্টিক জারে ৫০ কেজি ক্রুড অয়েল ছিল।

বিপিসির কর্মকর্তারা আরও জানান, রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বেসরকারি জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির কাছে কম দামে জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ১৭৮ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে বিপিসি বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে রাশিয়ার বিভিন্ন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্বল্পমূল্যে জ্বালানি সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করে। রাশিয়া থেকে বর্তমানে ভারত ও চীন বিশ্ববাজারের চেয়ে কম দামে জ্বালানি তেল কিনছে।  
 

Comments