স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণে এলাকায় আনন্দের বন্যা

ছবি: সংগৃহীত

রংপুর শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামটি এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে ফুটবলকন্যাদের হাত ধরে। জাতীয় নারী ফুটবল দলসহ বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দল ও ক্লাবে খেলছেন এখানকার মেয়েরা। তাদেরই একজন সিরাত জাহান স্বপ্না। 

তার ধুলোমাখা শৈশব আর কৈশোরের দিনগুলো ছিল অভাব অনটনে ভরা। তবুও শত বাধা পেরিয়ে আজ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উঠলেন অজপাড়াগাঁয়ের এই মেয়েটি।

পালিচড়া জয়রাম গ্রামে জন্ম নেওয়া স্বপ্নার ফুটবল খেলা নিয়ে যারা এতদিন বিরোধিতা করতেন আজ তারাও খুশিতে আত্মহারা।

নেপালের সঙ্গে ইতিহাস গড়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা ফুটবল দলের কৃতিত্বে খুশি গোটা দেশ।

গত মঙ্গলবার পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে স্বপ্নার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকে স্বপ্নার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসছেন তাদের বাড়িতে। মিষ্টি বিতরণ করছেন, হৈ হুল্লোড়ে মেতেছেন গ্রামের মানুষ। হাট-বাজার, দোকান, পাড়া-মহল্লা সবখানেই এখন চলছে স্বপ্নার বন্দনা। যা শুরু হয়েছে সোমবার রাত থেকেই।

স্থানীয় যুবক সাকিব আল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিরাত জাহান স্বপ্না যেমন আমাদের গর্ব তেমনি, গোটা দেশের একজন সম্পদ। এই গ্রামের মেয়েরা অনেক বাধা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলা শুরু করে। আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্বজয়ের। সেটি পূরণ হয়েছে।'

৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট স্বপ্না। ছোট বেলা থেকে স্বপ্নার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখে রাগ করতেন মা লিপি বেগম। পরে মেয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনে উৎসাহ দেন।

লিপি বেগম বলেন, 'চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তার ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তখন রাগ করতাম। পরে আমার ভাই আব্দুল লতিফ এসে তাকে নিয়ে যায়। সেই থেকে ফুটবল খেলা শুরু। মেয়েকে খুব কষ্ট করে মানুষ করছি। আজ গর্ববোধ হচ্ছে।'

স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী একজন কৃষক। মেয়ের এই সাফল্যে তার আনন্দের সীমা নেই। 

মোকছার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খুব আনন্দ লাগছে। আজকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার মেয়ে খেলেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। সে যাতে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারে।'

পালিচড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বপ্না আমাদের গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছে। তার কারণে গোটা দেশের মানুষ আজ এই অজপাড়াগাঁটিকে চিনেছে। আমরা তার এই সাফল্যে গর্বিত।'

সদ্যপুস্করিণী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ মিলন আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই গ্রাম নারী ফুটবলারদের গ্রাম। এর আগে কখনো সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এটাই প্রথম। এই দলে স্বপ্না ১০ নস্বর জার্সি পরে খেলেছে। তার এই সফলতায় আমরা খুশি এবং আনন্দিত। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, তাকে বড় সংবর্ধনা দেওয়ার।'

১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

এই টুর্নামেন্টে স্বপ্নার জোড়াগোলে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক গোল দিয়েছে স্বপ্না। ভুটানকে এক গোল দেওয়ার ১২ মিনিটের মাথায় ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। 

ফাইনালে স্বপ্নাকে মাঠে নামানো হয়েছিল। কিন্তু ইনজুরির কারণে কিছুক্ষণ পরে তাকে তুলে নেওয়া হয়। ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের বিপক্ষে মোট ৪ গোল করেছেন স্বপ্না।

 

Comments