বিদায় ‘কিং অব কমেডি’ রাজু শ্রীবাস্তব

রাজু শ্রীবাস্তব। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কমেডি কিং বলা হয় রাজু শ্রীবাস্তবকে। তিনি আজ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। জিম করার সময় বুকে ব্যথা অনুভবের পর গত ১০ আগস্ট তাকে দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্ট্যান্ড-আপ কমেডি নিয়ে ছিল তার বর্ণিল জীবন। বলিউড চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে টিভি শো, রিয়েলিটি শো- সবখানেই তিনি ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়।

রাজু শ্রীবাস্তবের মূল নাম সত্য প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তাকে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির বিখ্যাত চরিত্রের জন্য 'গজধর ভাইয়া' বলেও ডাকা হতো। রাজু ১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের কানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। কয়েক দশক ধরে পুরো কমেডি জগতকে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন। পেয়েছিলেন সব বয়সের দর্শকের ভালোবাসা। তিনি ছিলেন তরুণ ও উদীয়মান কৌতুক অভিনেতাদের অনুপ্রেরণা।

শুরুর জীবন

১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্ম নেওয়া রাজু শ্রীবাস্তব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব ছিলেন সরকারি কর্মচারী এবং কবি। তার বাবা সবার কাছে 'বলাই কাকা' নামে পরিচিত ছিলেন।

স্কুলজীবনে মিমিক্রি

রাজু স্কুলজীবন থেকে মিমিক্রিতে পারদর্শী ছিলেন। আর এটি দিয়েই তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। ডা. বিবেক বিন্দ্রাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে রাজু বলেছিলেন, কীভাবে তার স্কুলের প্রিন্সিপাল তার মিমিক্রি বা কাউকে অনুকরণ করাকে সমর্থন করেছিলেন।  তিনি বলেছিলেন, 'অন্যরা যখন আমার অনুকরণ নিয়ে মজা করত, তখন আমার প্রিন্সিপাল সমর্থন দিতেন। আমার ধারাভাষ্যের জন্য মহল্লা (স্থানীয়) ক্রিকেট ম্যাচেও ডাকা হতো। যে শটগুলো খেলা হতো তা নিয়ে কথা বলতে না পারলেও খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলতাম। কারণ আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে জানতাম। এটাই মানুষকে আমার স্টাইলের প্রতি আকৃষ্ট করেছ।' যদিও রাজু অমিতাভ বচ্চনকে নকল করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন।

তার ছেলেবেলার একটি মজার গল্প আছে। তিনি নিজেই বিন্দ্রাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সেটি ছিলে একটি মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া নিয়ে। বিন্দ্রার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'শশী কাপুরের গলায় একটি মেয়েকে আমি প্রপোজ করেছিলাম। তবে, আমাকে দেখে নয়- মেয়েটি আমার অনুকরণে মুগ্ধ হয়েছিল। সে আমাকে অন্যান্য অভিনেতাদের মিমিক্রি করতে অনুরোধ করে। শত্রুঘ্ন সিনহা এবং ধর্মেন্দ্রর কণ্ঠেও বলেছিলাম- 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'। কিন্তু সে পুরো বিষয়টি মজার ছলে নিয়েছিল!'

বলিউড কর্মজীবন

গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরপরই রাজু শ্রীবাস্তব চলচ্চিত্রের জন্য মুম্বাই চলে যান। জিনিউজ বলছে, মুম্বাইতে গিয়ে চলচ্চিত্রে কাজ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কিছুদিন অটো চালিয়েছিলেন। জিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তখন তিনি খুব স্ট্রাগল করছিলেন। এমনি ৫০ টাকার জন্যও স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শো করতেন। এরপর হিন্দি চলচ্চিত্রে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালে তেজাব সিনেমার মাধ্যমে তার পথচলা শুরু হয়। যেখানে তিনি অনিল কাপুরের কলেজ বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছোট্ট চরিত্র করেও সেবার তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি ম্যানে পেয়ার কিয়া, বাজিগর, বিগ ব্রাদার এবং আমদানি আতানি খরচা রুপিয়া মতো বলিউড সিনেমাতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে থাকেন।

দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ

স্টার ওয়ানের এই শোটি রাজুর জীবনের একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তিনি ২০০৫ সালে শোয়ের প্রথম সিজনে অংশ নেন এবং সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি নিজের গুণে ভারতে একটি পারিবারিক নাম হয়ে ওঠেন। তার 'গজধর ভাইয়া' চরিত্রটি দর্শকদের কাছ থেকে দুর্দান্ত প্রশংসা পায়। রাজু শ্রীবাস্তব এই শোতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন, কিন্তু জনপ্রিয়তা প্রথম ছিলেন এবং 'কিং অব কমেডি' খেতাব পান। তিনি ভারতীয় রাজনীতিবিদদের কাছেও প্রিয় ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদেরও অনুকরণ করার জন্য পরিচিত ছিলেন। এই তালিকায় ছিলেন- ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালু প্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব- এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

অন্যান্য টিভি শো

দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জে প্রশংসিত হওয়ার পর রাজু শ্রীবাস্তব বিগ বস, কমেডি সার্কাস, রাজু হাজিরা হো, লাফ ইন্ডিয়া লাফ এবং কমেডি কা মহা মুকাবালার মতো অনেক মূলধারার রিয়েলিটি শোতে অংশ নেন। তিনি নাচের রিয়েলিটি শোতে স্ত্রী শিখার সঙ্গে দম্পতি হিসেবেও অংশ নিয়েছিলেন। কমেডি নাইটস উইথ কপিল এবং দ্য কপিল শর্মা শো-এর মতো জনপ্রিয় শোতেও কপিল শর্মার সঙ্গে এই কৌতুকাভিনেতা কাজ করেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন

রাজু শ্রীবাস্তব সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন, যখন তিনি কানপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পান। তবে তিনি দলের স্থানীয় ইউনিটের সমর্থন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং দলের টিকিট ফিরিয়ে দেন। পরে ভারতীয় জনতা পার্টিকে সমর্থন জানান। ২০১৪ সালে তিনি তাদের ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেন। এই কৌতুকাভিনেতা অনুষ্ঠান এবং মিউজিক ভিডিও'র মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রচার চালান। তিনি টিভি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধির প্রচার করেন। উত্তরবঙ্গের ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি।

স্ত্রী ও পরিবার

রাজু শ্রীবাস্তবের বাবার নাম রমেশচন্দ্র শ্রীবাস্তব। তার মায়ের নাম সরস্বতী শ্রীবাস্তব। তার একজন ছোট ভাই আছে, যার নাম দীপু শ্রীবাস্তব। রাজু শ্রীবাস্তব ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই লক্ষ্ণৌ থেকে শিখাকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান আছে- অন্তরা ও আয়ুষ্মান।

রাজু শ্রীবাস্তবের প্রয়াণে ভারত একজন কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতাকে হারাল, যিনি কখনো দর্শকদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যর্থ হননি।

সূত্র: জিনিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডেকান হেরাল্ড, ডিএনএ

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

6h ago