বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশে তৈরি জার্সি

বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য শুধু জার্সির রেপ্লিকা নয়, ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ফিফা) খেলোয়াড়দের জন্যও জার্সি তৈরি করছে বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলো।

একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্পোর্টস ক্লাবের জন্যও বাংলাদেশি পোশাক কারাখানাগুলো জার্সি তৈরি করছে।

উদাহরণস্বরূপ, চট্টগ্রামভিত্তিক নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক সনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ এর জন্য ৬ লাখ জার্সি পাঠিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু আমরা সরাসরি ফিফার সঙ্গে লেনদেন করি না, তাই বিক্রেতাদের মাধ্যমে এ বছরের এপ্রিলে আমি সর্বশেষ চালানটি পাঠিয়েছি।'

তবে, প্রতিটি জার্সির দাম জানতে চাইলে তিনি তা জানাননি।

স্পোর্টসওয়্যার খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে শহীদ উল্লাহ আরও বলেন, '১ বছরে আমার কারখানা থেকেই আমি ১৮ মিলিয়ন ডলারের নিটওয়্যার রপ্তানি করেছি। আমার প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮০০ জন কর্মী রয়েছেন।'

নারায়ণগঞ্জভিত্তিক নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের জন্য আমি আড়াই লাখ জার্সি রপ্তানি করেছিলাম।'

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থকদের জন্য জার্সির রেপ্লিকা পাঠিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

কাতার বিশ্বকাপের জন্য জার্সি পাঠাননি এহসান। তবে, তিনি নিয়মিত বার্সেলোনায় রিয়াল মাদ্রিদ বাস্কেটবল দলের জন্য অফিসিয়াল জার্সি পাঠান। কারণ তার কারখানাটি স্প্যানিশ পেশাদার বাস্কেটবল দলের অফিশিয়াল সরবরাহকারী।

তিনি বলেন, 'প্রতি ৫ মাস অন্তর আমার কারখানা ওই ক্লাবের জন্য বেশ ভালো পরিমাণ জার্সি পাঠায়।'

বর্তমানে তিনি মূলত ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর জন্য কটনের তৈরি জার্সি পাঠান।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, 'কটনের চেয়ে ম্যানমেড ফাইবার থেকে তৈরি জার্সির দাম বেশি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসার ভবিষ্যৎ হচ্ছে এমএমএফ (ম্যানমেড ফাইবার) তৈরি জার্সি ও স্পোর্টসওয়্যার। কারণ ফ্যাশন ও স্টাইলে পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।'

উদাহরণস্বরূপ, অফিসগামী অনেকে কটন ও ম্যানমেড ফাইবারের তৈরি ফরমাল পোশাকের পরিবর্তে টি-শার্ট, স্পোর্টওয়্যার ও লাইটওয়েট সোয়েটারের মতো নৈমিত্তিক পোশাক পরেন।

এর ফলে বাংলাদেশি নৈমিত্তিক পোশাকের চাহিদা ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।

নারায়ণগঞ্জের আরেক নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমবি নিট ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম জানান, ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ ইউরোপের ৮টি দেশের জন্য তিনি ১২ লাখ জার্সি পাঠিয়েছিলেন।

এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও তিনি ৮ লাখ জার্সি পাঠিয়েছিলেন। তবে, কাতার বিশ্বকাপের জন্য এখন পর্যন্ত তিনি কোনো জার্সি পাঠাননি বলে জানিয়েছেন।

জার্সি বিক্রি থেকে লাভের বিষয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'বিশেষ ধরনের পোশাক হওয়ার ক্রেতারা এর জন্য অতিরিক্ত কিছু দেয় না।'

আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো দাম পেতে সম্প্রতি ম্যানমেড ফাইবারের পোশাক তৈরির পরিমাণ বাড়িয়েছে দেশীয় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো।

তারা আশা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য অর্জনে জার্সি ও স্পোর্টসওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গত অর্থবছরে গার্মেন্টস চালানের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ (৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার)। এর মধ্যে নিটওয়্যারের চালান থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নিটওয়্যার আইটেমগুলোর বেশিরভাগই জার্সি ও স্পোর্টসওয়্যার।

Comments

The Daily Star  | English

Foreigner detained with over 8kg cocaine at Dhaka airport

The street value of the seized contraband is around Tk 130 crore

37m ago