মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অপহরণ: পণ দিয়েও মেলেনি মুক্তি

অপহৃত সোহেল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

৫ লাখ টাকা পণ দেওয়ার পরেও মুক্তি পাননি মালয়েশিয়ায় অপহৃত প্রবাসী বাংলাদেশি সোহেল মিয়া (৩৯)। অপহরণের ৯ দিন পার হলেও তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় তাকে উদ্ধারে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবারের সদস্যরা।

সোহেল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দক্ষিণ ধলাপাড়া গ্রামের মরহুম আহমেদ মিয়ার ছেলে। ১৫ বছর ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় একটি কারখানায় কাজ করছেন।

সোহেলের স্বজনরা জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে কুয়ালালামপুরের তামিলযায়া এলাকায় নিজ বাসার কাছ থেকে তাকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে যায়।

সোহেলের পাশের ভবনে বাস করা আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি মিজান বলেন, 'ঘটনার দিন কাজ থেকে এসে মোবাইলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর রাত ৯টার দিকে বাসার নিচে যান সোহেল। বাসার নিচ থেকেই অপহরণকারীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।'

২৮ সেপ্টেম্বর সোহেলের বোন জামাই মো. বিল্লাল হোসেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে সোহেলের আত্মীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী হাশেম আহমেদ গত ২ অক্টোবর জহুর বারু সেলাতান থানায় (বালাই) অভিযোগ দায়ের করেন।

থানায় দায়ের করা অভিযোগে পরিবার জানায়, ঘটনার রাত ২টার দিকে সোহেলের বোনজামাই বিল্লালকে মালয়েশিয়ার একটি নম্বর থেকে ফোন করে সোহেল জানায়, অপহরণকারীরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। ৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। কে বা কারা অপহরণ করেছে, তা বলার আগেই ফোনটি কেটে দেওয়া হয়। পরের দিন সকাল ১০টায় একই নম্বর থেকে আবারও ফোন করে 'দ্রুত টাকা না পাঠালে তারা আমাকে মেরে ফেলবে' বলে জানায় সোহেল।

কোথায়, কার কাছে টাকা পাঠাতে হবে? জানতে চাইলে সোহেলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আরেক বাংলাদেশি জনতা ব্যাংক বরিশাল শাখার কুলপাটোয়া পোল্ট্রি ফিডের নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয় এবং সেখানে মুক্তিপণ পাঠাতে বলে।

সোহেলের বোনজামাই বিল্লাল পরিবারকে ঘটনাটি জানালে তারা ঋণ করে মুক্তিপণের টাকা দ্রুত জোগাড় করে। ২৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সামী টেলিকমের মাধ্যমে অপহরণকারীদের দেওয়া জনতা ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া হয়। ওইদিনই অপহরণকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ৫ লাখ টাকার মানি রিসিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অপর প্রান্ত থেকে 'ওকে' লিখে জবাবও দেওয়া হয়। কিন্তু, এরপরও সোহেলের কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার ও প্রবাসের স্বজনরা। সেই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।

বিল্লাল বলেন, 'দাবি করা মুক্তিপণ পুরোটা দিয়েও সোহেলের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।'

'আমাদের ধারণা, ফোনে মুক্তিপণ দাবি করা ওই প্রবাসী বাংলাদেশিই অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তবে তার কোনো পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি', বলেন তিনি।

এ ছাড়াও, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে সোহেলকে উদ্ধারে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে বলেও জানান বিল্লাল।

জহুর বারুর প্রবাসী বাংলাদেশি মোস্তাফা হোসেইন জানান, জহুরবারু সেলাতান বালাইয়ে (থানায়) অভিযোগ দায়েরের পর মালয়েশিয়া পুলিশ সোহেলকে উদ্ধার করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (শ্রম) নাজমুস সাদাত সেলিম জানান, অপহরণ বিষয়ে হাইকমিশন অবগত নয়। এখনো পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে হাইকমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Digital banks must have Tk 300 crore paid-up capital: Bangladesh Bank

The banking watchdog refixed and raised the amount, which was Tk 125 crore earlier

59m ago