মানসিক রোগ চিকিৎসায় ‘সাংস্কৃতিক’ থেরাপি গবেষণায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণারত শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

মানসিক রোগীদের শুধু ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন মানসিক পরিচর্যা। মানসিক রোগীদের সুস্থতার জন্য হাসপাতাল, পরিবার ও সমাজের সর্বস্তরে চিত্ত বিকাশে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক শিক্ষার্থী মানসিক রোগীদের সুস্থতার জন্য ওষুধের পাশাপাশি 'সাংস্কৃতিক থেরাপি'র মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার গবেষণামূলক উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীনের তত্ত্বাবধানে ওই বিভাগের প্রথম বর্ষের ৫ শিক্ষার্থী পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝে গবেষণামূলক সাংস্কৃতিক থেরাপি প্রয়োগের এই উদ্যোগ নিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন ফজলে নাভিদ অনন, তানভীর নেওয়াজ তীর্থ, জান্নাতুল মাওয়া নিবিড়, ফারজানা আফরিন মিম ও সিঁথি ইসরা রিসিল।

গত ২ দিন পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের হিস্ট্রি যাচাই-বাছাই করেছেন তারা। এরপর চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রোগীদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। এই রোগীদের মাঝে সাংস্কৃতিক থেরাপি প্রয়োগের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পরিদর্শনকালে ওই ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাফফাত ওয়াহিদ, মেডিকেল অফিসার ডা. শফিকুল আজম জিকো এবং সাইক্রিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার মোজাহার আলীসহ হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে রোগের ধরন ভেদে ৩টি সাংস্কৃতিক থেরাপি তুলে ধরেন।

থেরাপিগুলো হচ্ছে—আর্ট থেরাপি, ড্রামা থেরাপি ও মিউজিক থেরাপি।

মূলত মানসিক রোগীর ধরন ভেদে এই ৩টি সাংস্কৃতিক থেরাপি প্রয়োগ করে রোগীর মানসিক বিষণ্ণতা, জড়তা তথা ভিতরের অব্যক্ত চাপা প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, গবেষণাকালে তারা সরাসরি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মাঝে আর্ট থেরাপি, ড্রামা থেরাপি ও মিউজিক থেরাপি প্রয়োগ করে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন।

ফজলে নাবিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এমন কিছু মানসিক রোগী আছেন, যাদের সামনে বিভিন্ন ধরনের শৈল্পিক আর্ট, চিত্তাকর্ষণমূলক ড্রামা প্রদর্শন বা মনোমুগ্ধকর সুর বাজালে তারা বেশ উৎফুল্ল, উদ্বেলিত ও মানসিক স্বস্তি বোধ করেন। এ ছাড়া, তারা এসব থেরাপির মাধ্যমে তাদের অতীত জীবনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিও খুঁজে পান।'

শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা রোগীদের অতীত জীবন, রোগের ধরন, চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে কোন রোগীর ওপর কি ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করা যাবে, তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। এরপর থেরাপি প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

২ দিন মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে গবেষণার মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার রাতে পাবনা সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, 'পৃথিবীর অনেক দেশে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি এ ধরনের চিত্ত বিকাশমূলক থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। তবে, বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়নি।'

প্রাথমিক গবেষণায় সাংস্কৃতিক থেরাপি প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি হওয়ায় এ ধরনের উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হলে দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাফকাত ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানসিক রোগ নিরাময়ে সাংস্কৃতিক থেরাপি হতে পারে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু ওষুধ দিয়ে মানসিক রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় অকুপেশনাল থেরাপি, সাইকো থেরাপিসহ নানা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সবসময় রোগীদের সব ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।'

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'রোগীদের হাসপাতালে আনার আগে বাড়িতেই এ ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করা গেলে অনেক চাপ অনেক কমে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হলে তা মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।'

তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগই অনেক বেশি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখনই এ ধরনের থেরাপি তাদের কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

53m ago