প্রধানমন্ত্রীর ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার সোনিয়া আক্তার স্মৃতি কারাগারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ' করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৫৩ ও ৫০৫ ধারায় মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজবাড়ী জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সদস্য সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে।
সোনিয়া আক্তার স্মৃতি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ' করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৫৩ ও ৫০৫ ধারায় মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজবাড়ী জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সদস্য সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে।

গতকাল বুধবার ভোররাতে রাজবাড়ী সদরে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

তার সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য (রাজবাড়ী-১) আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, 'সোনিয়া আক্তার স্মৃতি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের রাজবাড়ী জেলার সক্রিয় সদস্য। কিন্তু যতটা তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারচেয়ে বেশি জড়িত সামাজিক কাজের সঙ্গে। তিনি রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তদাতার সন্ধান করে দেয় তার এই ক্লাবটি।'

তিনি আরও বলেন, 'তার স্বামী থাকেন সৌদি আরবে। সার্বিকভাবে আর দশটি মধ্যবিত্তের মতোই তাদের জীবনযাপন। তার মধ্যেও সামাজিক কাজের জন্য তিনি অন্তঃপ্রাণ। বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকায় তিনি কাউকে রিকশা কিনে দেন, কাউকে ভ্যান কিনে দেন, কাউকে গরু বা ছাগল কিনে দেন— এভাবে সব সময় বিপদে মানুষের পাশে থাকেন।'

গত ৩১ আগস্ট স্মৃতির ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ৩ অক্টোবর রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মো. সামসুল আরেফিন চৌধুরী।

সামসুল আরেফিন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাসিন্দা এবং মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

তার এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীতে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৫৩ ও ৫০৫ ধারায় মামলা হয়।

ফেসবুকে স্মৃতির কার্যক্রম সম্পর্কে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, 'রক্তদাতাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়, নতুন রক্ত রক্তদাতাদের ক্লাবে যুক্ত করতে হয়, কারো রক্ত লাগলে দাতাদের মধ্য থেকে কাউকে পাঠাতে হয়— সব মিলিয়ে তিনি সব সময় ফেসবুকে সক্রিয়। তিনি খুবই মার্জিত ও পরিশীলিত মেয়ে।'

মামলা করা হয়েছে যে ফেসবুক পোস্ট ধরে সে সম্পর্কে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, 'রাজবাড়ী আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তার পেছনে লেগে ছিল। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিষয়ে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্মৃতি নিজের মন্তব্য ফেসবুকে লেখেন। সেই মন্তব্যের জেরে এই মামলা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মামলা হওয়ার পর রাত ১টা দেড়টার দিকে পুলিশ তাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ২ শিশু সন্তান ও অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে তিনি বেড়াডাঙ্গার ৩ নম্বর রোডের বাসায় থাকেন। স্মৃতি যা লিখেছিলেন, তারচেয়ে গুরুতর কথা মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছে। ওর এই সামান্য কথা নিয়ে মামলা ও গ্রেপ্তার করে প্রধানমন্ত্রীর কী উপকার হলো কে জানে!'

দণ্ডবিধির ১৫৩ ধারায় বলা হয়েছে দাঙ্গা সংঘটনের উদ্দেশ্যে বেপরোয়াভাবে উস্কানি দান করা প্রসঙ্গে এবং ৫০৫ ধারায় বলা হয়েছে, জনসাধারণের অনিষ্ট হতে পারে এমন ধরনের বিবৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে।

স্মৃতির পোস্ট নিয়ে অভিযোগে সামসুল আরেফিন লিখেছেন, 'আসামি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য উল্লেখিত মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানিকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম/ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করেছেন।'

আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, 'আদালতে স্মৃতির জামিন চাইলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি। এই ধারা ২টির মধ্যে ৫০৫ জামিনযোগ্য না। আগামী সোমবারে আমরা আবার যাব আদালতে।'

মামলায় গতকাল ভোররাতে গ্রেপ্তারের পর বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে।

রাজবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে গতকাল আদালতে নেওয়া হলে তিনি জামিন আবেদন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী জেলা কারাগারে রয়েছেন।'

স্মৃতির সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যাওয়ার অভিজ্ঞা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম রাজবাড়ী জেলা কারাগারে। জেলারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু, কারাগারে অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও দেখা করতে পারিনি।'

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Pharma Sector: From nowhere to a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

17h ago