সময়ের সঙ্গে ইলিশের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক না: মৎসমন্ত্রী

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক না মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। ছবি: ফাইল ফটো

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক না মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যিনি মাছ আহরণ করে আনেন, তাকে ঝুঁকি নিয়ে সাগরে-জলাশয়ে যেতে হয়। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চমৎকার জিনিসটা নিয়ে আসেন। বাজারের সবচেয়ে ভালো ফলটি আপনি বেশি দামে কেনন। ইলিশ কিন্তু তেমন একটি মাছ। কোথাও কোথাও কিছু সিন্ডিকেট কাজ করে। অনেকে ইলিশ আটকে রেখে অল্প কিছু ইলিশ বাজারে নিয়ে আসে। এটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার বা বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের। আমি মনে করি, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম কিছু বাড়াটা অস্বাভাবিক না।

শ. ম. রেজাউল আরও বলেন, বাজারে মাছ-দুধ-ডিম বিক্রি করার দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের মন্ত্রণালয় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, যখন বলে গরুর মাংস এত টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে না। আমরা আমাদের উৎপাদিত গরুর মাংস, ডিম, দুধ কোনো রকম ভর্তুকি ছাড়াই বিক্রি করে দেখিয়েছি, যদি অন্যরা লাভ একটু কম করেন, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তাহলে কম দামেও বিক্রি করা সম্ভব। ইলিশ উৎপাদন-আহরণের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার মতো জনবল আমাদের মন্ত্রণালয়ের নেই।

ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। তারপরও করোনাকালে কিছু বিপর্যয় সারা দুনিয়ায় হয়েছে। সেই বিপর্যয় থেকে আমরা পরিত্রাণ পাইনি। ফলে এই মুহূর্তে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইলিশ যদি বৃদ্ধি না পেত, তাহলে এত টাকা আমরা রপ্তানি করে বিদেশ থেকে আনতে পারতাম না। অতীতে অনেকে বলতো, ইলিশের ছবি এঁকে রাখতে হবে যেন আমাদের পরের প্রজন্মকে দেখাতে পারি এ রকম একটি মাছ ছিল। সেই জায়গা থেকে দ্বিগুণ ইলিশ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে আমাদের গর্বের ইলিশ আমরা ফিরে পেয়েছি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, কখনো কখনো কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়, বৈরী পরিবেশ, অসাধুভাবে বালু উত্তোলন করায় কোনো কোনো জায়গায় এমনভাবে ভাঙনের সৃষ্টি হয় যে, ইলিশ সেখানে ডিম ছাড়তে পারে না। কিছু যানবাহনের পচা তেল নির্গত হলে ওই তেল একটা সময় একেবারে নিচে চলে যায়, ইলিশের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মা ইলিশ ৬ লাখ ডিম ছাড়ে। এখান থেকে যদি ১০ ভাগের এক ভাগ মাছও পাই আমরা বা তারও অর্ধেক মাছ যদি পাই আমরা তাহলে কী পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হবে ধারণা করার সুযোগ আছে।

গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের ব্যবস্থাপনায় তা বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অটোমেটিক্যালি হয়নি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং ইলিশকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যাবে; আমাদের গবেষণাগারে যারা ইলিশ গবেষণায় যুক্ত তারা বিপুল ভূমিকা রাখছেন। আমরা আশা করছি, ক্রমান্বয়ে ইলিশের উৎপাদন এমনভাবে বাড়বে যে, বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সব জায়গায় মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে—বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত দেশের প্রতিটি মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করুক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে বেশ কিছু দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রপ্তানি এর আগেও হয়েছে, তবে এভাবে হয়নি এবার যে পরিমাণে হয়েছে। এবার অধিকাংশ রপ্তানি ভারতে হয়েছে। আরও কিছু রাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে কিন্তু সেটার সংখ্যা খুব বেশি না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে তো ইলিশ মোটেই পাওয়া যেত না। এখন ইলিশ অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, আমার মনে হয় দেশের ৬৪ জেলার সবখানে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছানোর আমার লক্ষ্য আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ইলিশ রপ্তানি আর বাড়ানো ঠিক হবে না। আমাদের সমুদ্রসীমায় কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ ইলিশ আহরণ বন্ধকালে কাজ করছে। মিয়ানমার বা অন্য কোনো দেশ এসে আমাদের সীমানায় ইলিশ আহরণের কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ চুরি করে বা অন্যভাবে পদক্ষেপ নিতে চায় আমরা তাদের গ্রেপ্তার করি। এখনো গ্রেপ্তার অনেকে বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করছি।

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

1h ago