মালয়েশিয়ায় অপহরণ: মুক্তিপণের টাকাসহ বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার ১

বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী সোহেল মিয়া (৩৯) অপহরণের ঘটনায় মুক্তিপণের টাকাসহ নাসির উদ্দিন (৩৮) নামে একজনকে বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। নাসির বরগুনার বামনা উপজেলার খোলপটুয়া এলাকার মরহুম আলতাফ হোসেনের ছেলে।

বরিশালে র‌্যাব-৮-এর উপ পরিচালক মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে খোলপটুয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে ঘাটাইল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মেজর জাহাঙ্গীর আরও জানান, প্রবাসী সোহেল রানা অপহরণের ঘটনায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় দায়ের করা মামলার সূত্রে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুক্তিপণের টাকা জমা দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি বরিশালে হওয়ায় এ বিষয়ে র‌্যাব-৮-এর সহায়তা চেয়েছিল ঘাটাইল থানা পুলিশ।

অপহরণকারীদের দাবি করা মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা সোহেলের পরিবার যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিল, তার মালিক গ্রেপ্তার মো. নাসির উদ্দিন। তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রেখেছিলেন বলে জানায় র‌্যাব।

এদিকে গতকাল বুধবার নাসিরকে আদালতে সোর্পদ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ঘাটাইল থানা পুলিশ। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আবারও রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে ঘাটাইল থানা পুলিশ। 

অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, 'নাসিরের অ্যাকাউন্টে মুক্তিপণের টাকা জমা হয়েছে এবং তার কাছ থেকে সেই টাকা উদ্ধারও হয়েছে। কাজেই সোহেল মিয়া অপহরণ মামলার রহস্য উদঘাটনে এ মুহূর্তে নাসিরই আমাদের একমাত্র সূত্র। তাই আমরা আবার আদালতে রিমান্ড আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

র‌্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন স্বীকার করেছেন মালয়েশিয়া থেকে সোহেলের পরিবারকে তার অ্যাকাউন্ট নম্বারটি দিয়েছিলেন নাসিরের চাচাত ভাই প্রবাসী মামুন শিকদার। 

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের তামিলজায়া এলাকায় বাসার কাছ থেকে সোহেল মিয়াকে অপহরণ করা হয়। এ ব্যাপারে দেশে ও মালয়েশিয়ায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনেও সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার। 

সোহেল মিয়া এখনো নিখোঁজ, পণ দিয়েও মুক্তি না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছে তার পরিবার।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দক্ষিণ ধলাপাড়া গ্রামের মরহুম আহমেদ মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানে একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি।

সোহেলের সন্ধানে ২৮ সেপ্টেম্বর ঘাটাইল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তার ভগ্নীপতি বিল্লাল হোসেন। ৩ অক্টোবর রাতে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, ঘটনার রাতে বিল্লাল হোসেনের হোয়াটসঅ্যাপে কল করে অপহরণের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়, না হলে সোহেল মিয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর অপহরণকারীদের দেওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড বরিশাল শাখার 'খোলপটুয়া পোল্ট্রি ফিড' নামের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ জমা করে সোহেলের পরিবার। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মানি রিসিট পাঠানো হলে 'ওকে' লেখা  জবাবও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও সোহেলের কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।

বুধবার রাতে মামলার বাদী বিল্লাল হোসেন ফোনে বলেন, 'অনেকের কাছ থেকে ধার-দেনা করে মুক্তিপণের টাকা যোগাড় করে দিয়েছিলাম। ১০ দিনও সোহেলের কোনো খবর না পাওয়ায় আমাদের দুশ্চিন্তায় বাড়ছে। তার বৃদ্ধ মা, বোনসহ পুরো পরিবার নিঘুর্ম রাত কাটাচ্ছে।' 

তিনিও মনে করেন গ্রেপ্তার নাসিরের কাছ থেকেই মালয়েশিয়ার অপহরকারীদের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং সোহেল মিয়ার সন্ধান পাওয়া যাবে।  

অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় অপহৃত সোহেল মিয়ার খোঁজে অভিযান অব্যাহত রেখেছে দেশটির পুলিশ। জহুর বারু সেলাতান থানা সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে সন্দেহজনক কয়েকটি অবস্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অপহরণ ঘটনার বিষয়ে ২ অক্টোবর সেলাতান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সোহেলের আত্মীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী হাশেম আহমেদ।

কুয়ালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রবাসী সোহেল মিয়ার অপহরণের ঘটনার বিষয়ে মিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago