ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার নতুন কমান্ডার, কে এই জেনারেল সুরোভিকিন

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশটির বিমানবাহিনীর জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাজিকিস্তান, চেচনিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন তিনি।

রুশ বাহিনীতে 'অত্যন্ত নির্দয়' একজন যোদ্ধা ও সামরিক নেতা হিসেবে পরিচিত ৫৫ বছর বয়সী জেনারেল সুরোভিকিন।

গতকাল রোববার কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

এই নিয়োগ এমন সময় এলো, যখন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটছে এবং দেশের জনগণের মধ্যে এ যুদ্ধ নিয়ে অসন্তুষ্টির পরিমাণ বাড়ছে।

শনিবার সুরোভিকিন নিয়োগ পাওয়ার আগে ২ জ্যেষ্ঠ রুশ সামরিক কমান্ডার চাকরি হারান। মূলত কিয়েভ এই আগ্রাসনের শুরুতে রাশিয়ার কাছে হারানো কিছু ভূখণ্ড পুনর্দখল করা এবং রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী কের্চ সেতু আংশিকভাবে ধ্বংসের পরই এল নেতৃত্বের এই নাটকীয় পরিবর্তন।

কে এই সুরোভিকিন

১৯৬৬ সালে সাইবেরিয়ার শহর নভোসিবিরিস্কে জেনারেল সুরোভিকিনের জন্ম হয়।

২০১৭ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে তিনি রুশ বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। যুদ্ধের পর তাকে 'রাশিয়ার বীর' খেতাব দেওয়া হয় এবং পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন মতে, তিনি রুশ সামরিক বাহিনীতে অত্যন্ত 'নির্দয়' ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।

দীর্ঘ সামরিক জীবনে ২ বার জেল খেটেছেন তিনি। তার নেতৃত্বাধীন সেনারা রুশ রাজধানী মস্কোতে ৩ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করার পর তিনি ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় আবারও কারাবরণ করেন সুরোভিকিন। তবে তাকে পরবর্তীতে বিনা বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়। ৪ বছর পর তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র পাচারের অভিযোগ আসে। বিচারে সাজা পেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

সুরোভিকিনের বিরুদ্ধে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে বোমাবর্ষণ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই হামলায় প্রায় পুরো শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময় রুশ বাহিনী দেশটির শাসক বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহ দমনে সহায়তা করছিল।

কেনো এই নিয়োগ

দনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বাহিনীর সাঁজোয়া যান। ছবি: রয়টার্স
দনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বাহিনীর সাঁজোয়া যান। ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধের শুরুতে একের পর এক বিজয়ের সন্ধান পেলেও, সম্প্রতি ইউক্রেনীয়দের দৃঢ় মনোবল ও পশ্চিমা মিত্রদের অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তার কারণে রাশিয়া বেশ বিপাকে পড়েছে।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, সুরোভিকিনকে নিয়োগ দেওয়া এটাই নির্দেশ করে, যে রাশিয়া বিচ্ছিন্নভাবে আক্রমণ না চালিয়ে একটিমাত্র অঞ্চলকে লক্ষবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে হামলা চালাবে।

সুইস মিলিটারি রিভিউর আলেক্সান্দ্রে ভট্রাভার্স বলেন, 'এটা লুহানস্ক হতে পারে, দনেৎস্ক হতে পারে, কিংবা হতে পারে আরও দক্ষিণের কোনো অঞ্চল। বস্তুত, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা হল, রুশ অভিযানের আওতা কমিয়ে আনা হচ্ছে।'

গত ফেব্রুয়ারিতে আগ্রাসন শুরুর পর যেসব অঞ্চলে রাশিয়া হামলা চালিয়েছিল, তার বেশিরভাগ অংশ থেকেই তারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে অথবা কিয়েভের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

ইতোমধ্যে কিয়েভ সহ অন্যান্য শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংবাদ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার প্রায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে আঘাত হেনেছে বলে জানা গেছে।

হয়তো 'নির্দয়' সুরোভিকিনের হাত ধরেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

2h ago