পুতিনের ৫ ‘মহাভুল’

পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ইউক্রেনে রাশিয়ার 'বিশেষ সামরিক অভিযান' ৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে। প্রথমদিকে, অধিকৃত দেশটিতে রুশ সেনাদের 'বিজয়' সংবাদ শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে উল্টো স্রোত বইতে দেখা যাচ্ছে।

আজ সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন'র প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভুল যুদ্ধনীতির কারণে' রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল সকালে এক সাক্ষাতকারে ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস মারফির মতে, এই যুদ্ধ পুতিনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক রুশ তরুণ এই যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে অস্বীকার করেছেন।

কারও কারও আশঙ্কা, পরাজয় ঠেকাতে পুতিন হয়তো পরমাণু বোমা ব্যবহার করতে পারেন। তবে সিনেটর মারফি সেই আশঙ্কাকে এই মুহূর্তে অমূলক মনে করছেন। পাশাপাশি তিনি হোয়াইট হাউসকে এই 'বিপদজনক' ব্যক্তিকে নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

গত ৬ অক্টোবর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অপর এক মতামত প্রতিবেদনে জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা তুলে ধরেন 'পুতিনের ৫ মহাভুল'।

তার দৃষ্টিতে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই মহাভুলগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে যে- তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে অতি আশা করেছিলেন। ইউক্রেনীয়রা তাদের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য লড়াই করছেন। তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন। তাদের এই মনোবল রুশ সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে 'পালিয়ে যেতে' বাধ্য করছে।

রুশ প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, তিনি আশা করেছিলেন যে- হামলার কয়েকদিনের মধ্যে কিয়েভ আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ইউক্রেনীয়দের দেশপ্রেমের সঙ্গে পশ্চিমের মিত্রদের সামরিক সহায়তা যোগ হওয়ায় ক্রেমলিনের হিসাব পাল্টে গেছে।

তৃতীয় 'ভুল' হিসেবে মারওয়ান বিশারা উল্লেখ করেছেন ন্যাটোর কথা। তার মতে, পুতিন ভেবেছিলেন- সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট'-নীতির কারণে ন্যাটো হয়তো দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

পুতিন ভেবেছিলেন যে, তিনি রুশ জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতাকে 'তুরুপের তাস' হিসেবে ব্যবহার করবেন। সন্দেহ নেই, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ইউরোপকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকের আশঙ্কা, আসন্ন শীতে সেখানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

কিন্তু পুতিনের এই হিসাবটিও ভুল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন আটলান্টিকের ২ পাড়ের দেশগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে।

এ ছাড়াও, পুতিন ভেবেছিলেন— প্রায় এক বছর আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের বিশৃঙ্খলভাবে প্রত্যাহার ও এর আগে ইরাক থেকে মার্কিনিদের সরে যাওয়ার ঘটনাগুলোর পাশাপাশি চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বাস্তবে দেখা গেছে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুধু মিত্রদের এক মঞ্চেই দাঁড় করাননি, তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে রাশিয়ার অর্থনীতিকে 'রুগ্ন' করে ফেলেছেন।

'নিঃসঙ্গ' হয়ে পড়ছেন পুতিন

অতি সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাদের পাল্টা হামলায় দখলকৃত দেশটির পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মস্কো নিজেদের সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়াও, নিজ দেশে রিজার্ভ সেনাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এসব সিদ্ধান্ত তাকে আরও 'অ-জনপ্রিয়' করে তুলেছে। আরও বেশি 'একা' হয়ে পড়েছেন তিনি। পুতিনবিরোধী বিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। রুশ নাগরিকরা দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছেন বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ অক্টোবর রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা বহুল আলোচিত সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ পুতিনের নেতৃত্বকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে— নতুন নতুন ইউক্রেনীয় হামলা ক্রেমলিনকে আরও নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।

পুতিনের 'সবচেয়ে পছন্দের সেতু'-তে হামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি 'গালভরা বুলি' দিয়েছেন বলে পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে মন্তব্য করেছে, 'পুতিনের এ হামলার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা নেই।'

যুদ্ধক্ষেত্রে পুতিন যখন 'সাফল্য' দেখাতে পারছেন না, তখন তিনি কর্নেল জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সুরোভিকিনের রয়েছে ১৯৮০-র দশকে আফগানিস্তান ও ১৯৯০-র দশকে চেচনিয়া যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। 'নিষ্ঠুরতার জন্য' এই জেনারেলের পরিচিতি আছে বলেও সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

তবে এর মাধ্যমে রাশিয়া চলমান যুদ্ধে কতটা সুবিধা করতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে।

গতকাল রোববার আল-জাজিরার 'পুতিন ইজ ফাইটিং অ্যালোন' শিরোনামের মতামতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্রমশ 'নিঃসঙ্গ' হয়ে পড়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, যাদেরকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মিত্র হিসেবে গণ্য করা হয় তাদেরকে ইউক্রেন যুদ্ধে এখন আর এই রুশ নেতার 'পাশে' দেখা যাচ্ছে না।

লন্ডনভিত্তিক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফেলো ও লেখক শ্যাক্সিমিলিয়ান হেস তার মতামত প্রতিবেদনে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচক চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে সুপরিচিত। তবে তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ড রাশিয়ার দখল করার নীতি মেনে নিতে পারেননি।

তার দাবি, তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বিরোধ থাকলেও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে এই ২ দেশের সরকারের মতপার্থক্য খুব একটা নেই। এমনকি রাশিয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও চীন আগ্রহী নয়।

রাশিয়ার অপর মিত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে পশ্চিমের বিরোধ থাকলেও দেশটির সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট মস্কো থেকে আঙ্কারাকে দূরে সরিয়ে রাখছে বলেও মনে করেন শ্যাক্সিমিলিয়ান হেস।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের অপর মিত্র ইরান এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে— তা বলাই বাহুল্য। গণআন্দোলন কঠোর হাতে দমন করে যাওয়ার কারণে তেহরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলছে পশ্চিমের দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আলি খামেনির প্রশাসন ক্রেমলিনের পাশে কতটা জোরালোভাবে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

পুতিনের মিত্ররা একে একে তার পাশ থেকে সরে গেলে তিনি কীভাবে এই যুদ্ধ পরিচালনা করবেন তাই এখন দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

3h ago