বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অঘটন, নামিবিয়ায় বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা

ছবি: টুইটার

টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ জিতে আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে লঙ্কানদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো। আইসিসির সহযোগী সদস্য নামিবিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেল তারা।

রোববার গিলংয়ের কার্ডিনিয়া পার্কে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে ৫৫ রানে জিতেছে নামিবিয়া। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তাদের করা ৭ উইকেটে ১৬৩ রানের জবাবে ৬ বল বাকি থাকতে মাত্র ১০৮ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

হতশ্রী ব্যাটিংয়ের খেসারত দিল দাসুন শানাকার দল। আর প্রথম ম্যাচেই দারুণ জয়ে বড় দলগুলোকে আগাম সতর্কবাণী দিয়ে রাখল উঠতি নামিবিয়া। যে সামান্য লড়াইটুকু করেছে লঙ্কানরা, তাও অধিনায়ক শানাকা (২৩ বলে ২৯ রান) ও ভানুকা রাজাপাকসের (২১ বলে ২০ রান) কল্যাণে। এই দুজন ছাড়া দুই অংক ছুঁতে পারেন কেবল ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (১১ বলে ১২ রান) ও মহেশ থিকশানা (১১ বলে অপরাজিত ১১ রান)। বাকি ব্যাটাররা সকলেই আউট হন এক অংকের ঘরে থাকতে।

ব্যাটে-বলে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন নামিবিয়ার বাঁহাতি অলরাউন্ডার ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ক। সাতে নেমে ২৮ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। জেজে স্মিটের সঙ্গে তার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে জয়ের পুঁজি মেলে দলের। পরে পেস বোলিংয়ে ৪ ওভারে তিনি ২ উইকেট শিকার করেন ২৬ রানে।

লক্ষ্য তাড়ায় নামিবিয়ানদের বোলিং তোপে শুরু থেকেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে লঙ্কানদের ইনিংস। দ্বিতীয় ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে টপ এজের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন ডেভিড ভিসে। মাত্র ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

পরের ওভারে বার্নার্ড শোল্টজকে চার মেরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন ধনাঞ্জয়া কিন্তু বিধি বাম। পরের ওভারেই তাকে হতাশ করে পর পর দুই বলে ফিরে যান পাথুম নিশাঙ্কা ও দানুস্কা গুনাথিলাকা। নামিবিয়ার এই জোড়া সাফল্য আসে বেন শিকঙ্গোর হাত ধরে। আরেকটু হলেই হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়ে যেতেন এই দ্রুতগতির বোলার। রাজাপাকসের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন হলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে।

কিছুটা সময় কোনো বিপদ ছাড়াই পার করেন ধনাঞ্জয়া ও রাজাপাকসে। সপ্তম ওভারে তাদের ১৯ রানের জুটি ভাঙেন ফ্রাইলিঙ্ক। তার স্ট্যাম্পের বল ফ্লিক করতে গিয়ে শিকঙ্গোকে ক্যাচ দিয়ে বসেন ধনাঞ্জয়া। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নরা।

ধনাঞ্জয়ার বিদায়ে উইকেটে আসেন শানাকা। রাজাপাকসেকে সঙ্গে নিয়ে তুলে নিতে থাকেন একের পর এক বাউন্ডারি। ছয়ের আশেপাশে থাকা রানরেট তারা দুজন নিয়ে যান সাতের ওপরে। শিকঙ্গোর করা দশম ওভার থেকে ১২ রান আদায় করে নেয় শ্রীলঙ্কা। শানাকা সেই ওভারে মারেন দুটি চার।

যখন মনে হচ্ছিল বিপদ কেটে গেছে, লঙ্কানদের তখনই আবার আঘাত হানে নামিবিয়া। ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট পান শোল্টজ। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিভান লা ককের হাতে ধরা পড়েন রাজাপাকসে। নামিবিয়ার পরবর্তী সাফল্যও আসে শোল্টজের হাত ধরেই। ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে মিড উইকেটে ইয়ান নিকোল লফটি-ইটনের ক্যাচ বানান তিনি।

লঙ্কানদের শেষ আশা হয়ে তখনও উইকেটে টিকে ছিলেন কাপ্তান শানাকা। তবে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনিও। ১৪তম ওভারে ফ্রাইলিঙ্কের বলে টপ এজের শিকার হন। ৮৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে কার্যত শেষ হয়ে যায় তাদের জয়ের সম্ভাবনা। এরপর টেল এন্ডারদের কল্যাণে কোনোমতে ১০০ পার করে তারা। মাঝে স্মিটের শিকার হয়ে ফিরে যান চামিকা করুনারত্নেও।

১৯তম ওভারের শেষ বলে যখন দুশ্মন্থা চামিরার উইকেটে তুলে নিয়ে বিজয় উল্লাসে মাতে নামিবিয়া। ২টি করে উইকেট নিয়ে এই জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন শোল্টজ, ভিসে, শিকঙ্গো ও ফ্রাইলিঙ্ক।

এর আগে ব্যাট হাতে বিপর্যয়ে পড়েছিল নামিবিয়াও। দ্বিতীয় ওভারেই মাইকেল ভ্যান লিঙ্গেনকে তুলে নেন চামিরা। এরপর প্রমোদ মাদুশান ফেরান লা কককে। ছোটখাট একটি ক্যামিও ইনিংস খেলে লঙ্কানদের ওপর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চালান লফটি-ইটন। তবে করুনারত্নের বলে উইকেটের পিছনে কুশল দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিলে সমাপ্তি ঘটে তার ইনিংসের। আউট হওয়ার আগে ১২ বলে ২০ রান করেন লফটি-ইটন।

৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা নামিবিয়ার হাল ধরেন অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস ও স্টেফেন বার্ড। অনেক দেখেশুনে খেলতে থাকে এই জুটি। এতে এক পর্যায়ে সাতের ওপর থাকা রান রেট নেমে আসে ছয়েরও নিচে। ১০ ওভার শেষে নামিবিয়ানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫৯ রান।

১২তম ওভারে লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গার গুগলিতে পরাস্ত হন অধিনায়ক এরাসমাস। তার বিদায়ে ভাঙে ৪১ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ২০ রান করেন এরাসমাস। এক ওভার বাদে মাদুশানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান বার্ডও। তিনি খেলেন ২৪ বলে ২৬ রানের ইনিংস।

পরের ওভারে আঘাত হানেন থিকশানা, তুলে নেন ভিসেকে। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা অলরাউন্ডার। নামিবিয়ার স্কোরবোর্ডে তখন রানটা ৯৩ হলেও উইকেট নেই ৬টি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন গল্প লেখেন ফ্রাইলিঙ্ক ও স্মিট। মাত্র ৩৩ বলে ৬৯ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়েন এই দুই অলরাউন্ডার।

চামিরাকে দিয়ে শুরু। এরপর একে একে হাসারাঙ্গা, মাদুশান, করুনারত্নে- সবার ওপরই চড়াও হন ফ্রাইলিঙ্ক-স্মিট। ইনিংসের শেষ বলে রান আউটের কবলে পড়েন ফ্রাইলিঙ্ক। তার আগে অবশ্য কাজের কাজটা সেরে ফেলেন। অপর প্রান্তে স্মিটও কম যাননি। ২টি করে চার ও ছক্কায় মাত্র ১৬ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

আগামী ১৮ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে নামিবিয়া। একই দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে ছন্দ ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা।

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

6h ago