‘গ্যাসের জন্য আরও বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত’

এলএনজি, স্পট মার্কেট, দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান,
এলএনজি কার্গো। ছবি: সংগৃহীত

চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে অর্ধেক সক্ষমতায় কাজ করতে হচ্ছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা শিল্প ইউনিটগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ব্যবসায়ীরা হতাশা নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য গতকাল বুধবার সরকারকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে।

গত কয়েক মাসে বিভিন্ন খাতে ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, বড় ব্যবসার মালিক এবং চেম্বার ও বাণিজ্য সংস্থার নেতারা আবারও এই দাবি উত্থাপন করেন।

রাজধানীর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের পর দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, তিনি আবারও শিল্প গ্যাসের বর্তমান দাম প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ২২ টাকা ৮৩ পয়সা করার প্রস্তাব করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা শিল্প ইউনিটগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে চাই, যাতে পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে পারি। আমরা গ্যাসের জন্য আরও বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত।'

বিটিএমএ সদস্যদের মিলগুলো গ্যাসের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। একটি ব্যবসায়িক সংস্থার তথ্য অনুসারে, এই মিলগুলো দেশের মোট গ্যাসের ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যবহার করে।

মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তারা অর্ধেক সক্ষমতায় ইউনিট চালাচ্ছেন। বর্তমান মূল্যে আন্তর্জাতিক স্পট বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করলে সরকারকে অতিরিক্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, 'যদি সরকার ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এলএনজি আমদানি করে, তাহলে শিল্প ইউনিটগুলোকে ৬ মাসের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে শেষ পর্যন্ত পণ্য রপ্তানি ও স্থানীয় শিল্পে কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে ৬ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার লাভ করবে সরকার।'

তিনি বলেন, 'প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অতিরিক্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। যদিও অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে। কারণ ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন কমে না যায়, সেই চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।'

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার শিল্পে গ্যাস সরবরাহের জন্য এলএনজি আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক। প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা প্রস্তাবটি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।'

তিনি জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট তৈরি হওয়ায় বর্তমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন।

সভায় উপস্থিত এক শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল উত্পাদক ও পোশাক রপ্তানিকারক জানান, সরকার আরও ফার্নেস অয়েল আমদানির পরিকল্পনা করছে, যাতে বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধান করা যায়।

সরকারকে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন পরামর্শ দিয়েছেন, যেসব শিল্প ইউনিট নিত্যপণ্য উৎপাদন করে, তাদেরকে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার দিতে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যুতের রেশনিং শিল্প ইউনিটগুলোর জন্য সঠিকভাবে কাজ করছে, কারণ শিল্পগুলোতে লোডশেডিং এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

এফবিসিসিআই প্রধান বলেন, 'বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে উৎপাদন চালিয়ে যেতে হবে।'

জসিম উদ্দিন গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অতিরিক্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের এলএনজি আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, 'ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট অতিরিক্ত খরচ হবে ২ বিলিয়ন ডলার।'

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল এক বিবৃতিতে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ শিগগির দূর করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের চাপ সংকট শিগগির দূর করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

7h ago