জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির বোঝা চাপবে যাত্রীর ঘাড়ে

ফাইল ছবি

আবারও জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ রুটের এয়ারলাইন্সগুলোকে সামলাতে হবে বড় ধরনের ধাক্কা। এ অবস্থায় পরিচালন ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, এর ফলে যাত্রীভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সেটা ভ্রমণের জন্য বোঝায় হয়ে দাঁড়াবে। 

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে।

বর্তমানে এক লিটার জেট ফুয়েলের দাম ১৩০ টাকা।

তবে বিপিসি অবশ্য আন্তর্জাতিক রুটের জন্য জেট ফুয়েলের দাম কিছুটা কমিয়েছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রুটের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ ডলার। যা আগে ছিল ১.০৯ ডলার।

বিপিসির সিদ্ধান্তকে 'হঠকারী' উল্লেখ করে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেছেন অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির স্টেকহোল্ডাররা। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজোরে জেট ফুয়েলের দাম স্থিতিশীল থাকার পরও দেশে দাম বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক।

গত ২৩ মাসে ১৭ বার জেট ফুয়েলের দাম বাড়াল পদ্মা অয়েল কোম্পানি।

অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিতে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।

একটি এয়ারলাইন পরিচালন ব্যয়ের ৪৬ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয় জ্বালানির পেছনে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি লিটার জেট ফুলেয়ের দাম ছিল ৪৮ টাকা। 

দেশের একাধিক এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মাসে জেট ফুয়েলের দাম ১৭০ শতাংশ বেড়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, 'সর্বশেষ সিদ্ধান্ত একেবারে অযৌক্তিক।'

বিপিসি একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে উল্লেখ করে মফিজুর বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।'

তিনি আর বলেন, 'আমরা বিপিসির একচেটিয়া ও হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে মুক্তি চাই। ঘন ঘন জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের এয়ারলাইন্স শিল্প ধ্বংসের পথে।'

আন্তর্জাতিক রুটে দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুর বলেন, 'অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার লিটার জেট ফুয়েল ব্যবহার হয়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রুটে ব্যবহার হয় প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ লিটার।'

তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'এই অবস্থায় সরকার কীভাবে অভ্যন্তরীণ রুটের দাম বাড়িয়ে এবং আন্তর্জাতিক রুটের দাম কমিয়ে ক্ষতির সমন্বয় করেবে?'

'এটা স্পষ্ট যে সরকার কিছু এয়ারলাইনন্সকে অযৌক্তিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে' তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার সহযোগিতা না করলে দেশের বিমান শিল্প টিকে থাকতে পারবে না।'

'বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পটি ইতোমধ্যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছে', বলেন তিনি।

ওয়াহিদুল একই সঙ্গে বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'দ্য বাংলাদেশ মনিটরের' সম্পাদক। তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ করে যশোর ও বরিশাল রুটে যাত্রীর সংখ্যা এরই মধ্যে কমে গেছে।'

তিনি বলেন, 'জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যদি বিমান ভাড়া আবারও বেড়ে যায়, তাহলে যাত্রীরা কেবল বিকল্প পরিবহন বেছে নেবে।'

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিপিসি প্রায় প্রতি মাসেই জেট ফুয়েলের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী বিমান ভাড়া বাড়ানো হলে আমরা যাত্রী হারানোর ঝুঁকিতে আছি।'

'এয়ার অপারেটররা দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিমান ভাড়া না বাড়ালে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় রয়েছি। তার ওপর আবারও জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো, কাটা ঘাঁয়ে নুনেন ছিটা।'

দেশের দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে অভ্যন্তরীণ রুটে গড়ে বিমান ভাড়া ছিল আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকায় উঠেছে।'

দুটি এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, ইউএস-বাংলা সাপ্তাহে প্রায় ৪৪৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং নভোএয়ার ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৩৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। 

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago