ব্রাজিলের নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট আজ, মতামত জরিপে এগিয়ে লুলা

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো (বাঁয়ে) ও প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিল্ভা (ডানে)। ছবি: এএফপি
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো (বাঁয়ে) ও প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিল্ভা (ডানে)। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ও নান্দনিক ফুটবলের জন্য বিখ্যাত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটগ্রহণ আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

একাধিক জরিপের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডানপন্থি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর সমর্থন আরও কমেছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।

জরিপ প্রতিষ্ঠান ডাটাফোলহা ও কোয়াএস্ট উভয়ই জানিয়েছে, লুলা ৫২ শতাংশ ও বলসোনারো ৪৮ শতাংশ ভোট পেতে পারেন। বলসোনারো ৩ দিন আগেও লুলার চেয়ে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। সে সময় সংশ্লিষ্টরা মনে করছিলেন, শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বলসোনারো।

সব মিলিয়ে, বেশিরভাগ জরিপের ফল বলছে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে ফিরতে যাচ্ছেন লুলা। এটি হতে পারে এক অসামান্য রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে তার কারাদণ্ড হয়েছিল। তবে আপিলের পর আদালত তা বাতিল করে।

১৬ অক্টোবর বিতর্কে অংশ নেন লুলা (বাঁয়ে) ও বলসোনারো (ডানে)। ছবি: রয়টার্স
১৬ অক্টোবর বিতর্কে অংশ নেন লুলা (বাঁয়ে) ও বলসোনারো (ডানে)। ছবি: রয়টার্স

কিছুটা স্রোতের বিপরীতে গিয়ে গত ২ অক্টোবরের প্রাথমিক ভোটে বলসোনারো জন-জরিপের চেয়ে অনেক ভালো ফল করেন।

আইপেক ও অ্যাটলাসইন্টেলের চূড়ান্ত জরিপে লুলার অবস্থানকে সুসংহত ও বলসানোরোর চেয়ে তিনি অনেক এগিয়ে আছেন বলে জানানো হয়েছে।

আইপেকের মতে লুলা ও বলসোনারোর পক্ষে যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৬ শতাংশ সমর্থন আছে। প্রথম রাউন্ডে অ্যাটলাসইন্টেলের পূর্বাভাষ সবচেয়ে নিখুঁত ছিল। তাদের মতে, লুলা ৭ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন।

গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মিনাস গেরাইসে সমর্থকদের সঙ্গে এক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বলসোনারো দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের প্রচারণা শেষ করেন।

অপরদিকে, লুলা বিদেশি সাংবাদিকদের জানান, দেশ শাসনের যোগ্যতা তার প্রতিপক্ষের নেই। এরপর তিনি সাও পাওলোর অন্যতম প্রধান সড়কে হাজারো সমর্থকদের সঙ্গে পদযাত্রা করেন।

গত শুক্রবার টেলিভিশনে সর্বশেষ বিতর্কে অংশ নেন এই ২ নেতা। বলসোনারো তার বিরুদ্ধে আসা সাম্প্রতিক এক অভিযোগের উত্তর দেন। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে নূন্যতম বেতন কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা তার নেই। বরং তিনি আবারও নির্বাচিত হলে নূন্যতম মজুরি বাড়িয়ে ১ হাজার ৪০০ রেইয়াস (২৬০ ডলার) করবেন।

২৮ অক্টোবর চূড়ান্ত বিতর্কে অংশ নেন ২ প্রার্থী। ছবি: এপি
২৮ অক্টোবর চূড়ান্ত বিতর্কে অংশ নেন ২ প্রার্থী। ছবি: এপি

তবে, সরকারের ২০২৩ সালের বাজেটে এ ধরনের পরিকল্পনার উল্লেখ নেই।

দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে ২ প্রার্থীর প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল অনিশ্চিত ভোটারদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা। বিশ্লেষকদের মতে, সময় পেলেও বলসোনারো তার পক্ষে খুব বেশি সমর্থন টানতে পারেননি।

প্রাথমিক ভোটে বলসোনারোর পক্ষে জন-জরিপের চেয়েও ভালো ফল আসে। তবে গত ২ সপ্তাহে তিনি অনেকাংশে জনসমর্থন হারিয়েছেন বলে জরিপে বলা হয়েছে।

প্রায় ১ সপ্তাহ আগে বলসোনারোর এক মিত্র তাকে গ্রেপ্তার করতে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর অতর্কিত গুলি করেন।

আজ রোববার তার অপর এক মিত্র কংগ্রেস সদস্য কার্লা জামবেলি সাও পাওলোর এক রেস্তোরাঁ লুলার সমর্থককে বন্দুক নিয়ে ধাওয়া করেন। সড়কে রাজনীতি নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জামবেলি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনি জেনেশুনে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগে আগ্নেয়াস্ত্র বহন না করার নিয়ম অমান্য করেছেন।

শেষ মুহূর্তে এই ২ অঘটন বলসোনারোর জনপ্রিয়তার ওপর বড় আঘাত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

চলতি মাসের শুরুতে, প্রথম বিতর্কে লুলা করোনা মহামারির ব্যবস্থাপনায় বলসোনারোর ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন। মহামারিতে ব্রাজিলে প্রায় ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। সেসময় লুলার বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বলসোনারো কথা বলেন।

গত শুক্রবারের বিতর্কে উভয় প্রার্থী ২০০৩ ও ২০১০ সালে লুলার ২ মেয়াদ নিয়ে কথা বলেন। বলসোনারো জানান, এ মুহূর্তে কার্যকর সামাজিক প্রকল্পগুলো বেশি কার্যকর।

লুলার দাবি, সে সময় দ্রব্যমূল্য বেশি থাকলেও তাতে অর্থনীতির উপকার হয়ে দারিদ্র্য দূর হয়েছিল।

আজ ব্রাজিলের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের কারণে রাত ৯টার মধ্যেই (বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর ৬টা) জানা যাবে কে হবেন ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট—রক্ষণশীল ও বাণিজ্যবান্ধব বলসোনারো, না কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার দেওয়া লুলা।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago